সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সিঙ্গাপুরে গিয়ে ক্ষমতা চাইতেই তারেকের বহিষ্কার চাইলো ভারত!

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। ফাইল ছবি

সম্প্রতি বিএনপির এক প্রথমসারির নেতা মেজর হাফিজ দল ছেড়ে দিয়েছেন। এ খবর নতুন কিছু নয়। কিন্তু মেজর হাফিজের দল ত্যাগ এবং বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনীতির পেছনে যে ঘটনা রয়েছে তা রীতিমতো চিত্তাকর্ষক।

কলকাতা নয়, ঢাকা নয়, দিল্লি নয়- বিএনপির প্রথমসারির তিন নেতা মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুল এবং খোন্দকার মোস্তাক হোসেন সম্প্রতি গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে। সেখানে বিখ্যাত মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তারা সাক্ষাৎ করেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের দুই শীর্ষ অফিসারের সঙ্গে। তারা সরাসরি প্রস্তাব দেন আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকারকে সরিয়ে তাদের জোটকে ক্ষমতায় আনার।

এই প্রস্তাব পাওয়া মাত্র প্রত্যাখ্যান করেন ভারতের দুই অফিসার। গত মাসের ২৬ তারিখে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে এই বৈঠক হয়। ভারতীয় অফিসাররা বলেন, বিএনপিকে একবার সাহায্য করে খুব ভুল করেছিলো ভারত সরকার। সেই ভুলের খেসারত অনেকদিন পর্যন্ত তাদের দিতে হয়েছে।

বিশেষত বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা তথা বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের কীর্তিকাহিনী উল্লেখ করে ভারতীয় অফিসাররা বলেন, তারেককে আর কোনভাবেই বিশ্বাস করা যায় না। শুধু তারেকই নয়, সে বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতাও ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। দলের নামে ‘ন্যাশনালিস্ট’ কথাটি থাকলেও দলের কাজকর্মে সেই শব্দের কোনও প্রভাব পাওয়া যায় না। বিএনপি নেতারা সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে গিয়ে ভারতীয় দুই অফিসারের কাছে অনুনয়-বিনয় করেন।

বলেন, আপনারা এবার আমাদের ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করুন। আপনারা আমাদের একটু বিশ্বাস করুন। ভারতীয় অফিসাররা এই ত্রয় বিএনপি নেতার মুখের ওপর বলে দেন, আপনারা আগে দল থেকে তারেক রহমানকে বহিষ্কার করুন। সেই সঙ্গে হেফাজত-এ-ইসলাম, জামায়াত এই সব সাম্প্রদায়িক দলগুলো থেকে আলাদা হয়ে যদি লড়াই করতে পারেন, তাহলে আমাদের কাছে আসবেন। আমরা ভুল করে একবার আপনাদের সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু যতদিন না আপনারা তারেক ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে আলাদা দল করতে পারেন, ততদিন ভারত আপনাদের কোনও অনুরোধ রাখতে পারছে না। জামায়াতপন্থী সামরিক অফিসার, পুলিশ অফিসার এবং সন্ত্রাসবাদী থেকে আপনারা মুক্ত হোন।

ভারতীয় প্রতিনিধিরা আরও বলেছেন, একবার আপনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে ভারতকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। তারেক এই সময়ে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস পাঠিয়ে ১৭ বার কত লোককে খুন করেছে তার হিসেব আমাদের কাছে আছে। তারেক দুবাইয়ে ভারতের এক নম্বর শত্রু দাউদ ইব্রাহিম, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই প্রধান, আমেরিকার সিআইএ এর বড় অফিসারদের সঙ্গে ঘনঘন বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের জন্মের নিন্দা করেছে তারেক।

তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সঙ্গে একসূত্রে বাধার পরিকল্পনাও আছে। সে ব্যাপারে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন তারেক রহমান। ক্ষমতায় এলে ৩৪টি ভারতীয় এলাকায় হামলা চালাবে বলেও মন্তব্য করেন তারেক। এই তারেকের তত্ত্বাবধায়নে কলকাতায় আমেরিকান সেন্টারে হামলা হয়েছিলো বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের মত।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারেকের পিতা জিয়াউর রহমান হিন্দুদের সমস্ত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিলি করে দিয়ে তাদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় ছিলেন। দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের কাগজপত্র দেখিয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, ‘এর জবাব দিন। বিএনপি নেতারা চুপ করে সব শোনেন।

ভারতীয় অফিসাররা বারবার বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ চালানোর জন্য যে সংবিধান রচনা করেছিলেন, সেই সংবিধান মেনে সারা বাংলাদেশে তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বরিশালের সেই পীর, হেফাজত, খেলাফত থেকে শুরু করে সকল সাম্প্রদায়িক দলগুলোর কার্যকলাপ সবই আমাদের নজরে আছে। দিল্লি চাইছে না প্রতিবেশি রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিদের দখলে আবার চলে যাক। সীমান্ত এলাকায় যেভাবে হেফাজতে ইসলাম, খেলাফতে ইসলাম এবং পীর অব বরিশাল একের পর এক জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে, তার যাবতীয় তথ্য আমাদের হাতে আছে। এই ধরণের দলকে আমরা কী করে সাহায্য করবো?’

‘তারেককে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আনা মানেই হলো আরেক লাদেনকে প্রতিবেশি রাষ্ট্রে বসানো। আমাদের মাঝে মাঝে মনে হয়, লাদেন নাকি তারেক, কে বড় সন্ত্রাসবাদী? তিনি ঘনঘন দুবাই এসে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে নানা নীল নকশা তৈরি করছেন। ক্ষমতায় এলে ১৫ দিনের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা ঢুকে তছনছ করে দিয়ে চলে যাবে।’

ভারতীয় কর্তারা মনে করেন, তারেক হলো এমন একজন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসবাদী যিনি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে হাজার হাজার পাউন্ড নিয়ে তাদের বোঝাচ্ছেন যে ক্ষমতায় এলে তারা বাংলাদেশকে পুরোপুরি ইসলামি রাষ্ট্রে পরিণত করবে। যা সাউথ ব্লক কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।

মেজর হাফিজ এই সব কারণেই বিএনপি ছেড়ে দিয়েছে বলে এখানকার ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান। তাই তাকে অনুসরণ করার জন্য বাংলাদেশের জেলায় জেলায় অনেকেই প্রস্তুত। বিএনপির প্রতিনিধিদের কাছে প্রশ্ন তোলা হয়- জামায়াত কবে জন্ম নিয়েছিলো? যে রাজাকার স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো, তারাই তো জামায়াত। জামায়াত-বিএনপি’র জোট সরকারের আমলে কত নিরীহ মানুষ খুন হয়েছে তার তালিকা তুলে ধরে বিএনপি নেতাদের বলেন ভারতীয় অফিসাররা।

সিঙ্গাপুরের আগস্ট বৈঠকের কারণে বাংলাদেশের বুকে যেনো আবারও আরেকটি অভিশপ্ত আগস্ট নেমে না আসে, সেদিকে নজর রাখছে ভারত। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল সাক্ষী থাকলো এই ঘটনা।

লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ