শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শর্তসাপেক্ষে ‘ফারাজ’ চলচ্চিত্র মুক্তির অনুমতি দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট

ঢাকার হোলি আর্টিজানের বাইরে নিরাপত্তা বাহিনী। ১লা জুলাই, ২০১৬

ঢাকার হোলি আর্টিজানে ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলিউড মুভি ‘ফারাজ’ এর মুক্তির ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করেছে ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট।

কিন্তু আদালত শর্ত দিয়েছে, ছবিটি পর্দায় দেখানোর সময় এই মর্মে একটি ‘ডিসক্লেইমার’ দিতে হবে যে সিনেমাটি ঢাকার জঙ্গী হামলার ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও সিনেমাতে তুলে ধরা ঘটনাগুলো ‘সম্পূর্ণ কাল্পনিক’ (পিওর ওয়ার্ক অব ফিকশন)।

বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুলের নেতৃত্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই সঙ্গেই বলেছে, ছবির নির্মাতা ও প্রযোজকদের এই ডিসক্লেইমারটি একেবারে ‘অক্ষরে অক্ষরে’ অনুসরণ করতে হবে।

ফারাজ সিনেমার একটি পোস্টার

বলিউডের সুপরিচিত পরিচালক হানসাল মেহতার নির্মিত এই ছবিটি আগামিকাল শুক্রবার (৩রা ফেব্রুয়ারি) ভারতের সিনেমা হলগুলোতে বাণিজ্যিক মুক্তি পাবে বলে কথা রয়েছে।

দিল্লি হাইকোর্টে আজকের এই রায়ের পর ছবিটির মুক্তিতে আর কোনও বাধা রইল না, তবে ছবিটিতে এই ডিসক্লেইমারটি তাদের যোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

একটি সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে সেলুলয়েডে কোনও ছবি বানানো হলে সেই হামলায় নিহত ভিক্টিমের প্রাইভেসির অধিকার লঙ্ঘিত হয় কি না, এবং ওই ভিক্টিমের অবর্তমানে সেই অধিকার তার নিকটাত্মীয়দের ওপর বর্তায় কি না – এই প্রশ্নটিকে ঘিরে আলোচিত মামলাটি ভারতে এক অভূতপূর্ব আইনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।

হোলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের অন্যতম অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর নিহত মেয়ের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করে, পরিবারের কোনও সম্মতি না নিয়ে এবং ভুল তথ্য উপস্থাপন করে এই ‘ফারাজ’ ছবিটি বানানো হচ্ছে।

ছবিটির মুক্তি আটকাতে চেয়ে তিনি ভারতের আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি হাইকোর্টে একক বিচারপতির বেঞ্চ ‘ফারাজ’ ছবিটির মুক্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন।

তখন বিচারপতির যুক্তি ছিল, প্রাইভেসির অধিকার একান্তভাবেই ‘ইন পার্সোনাম’ (সেই ব্যক্তির নিজস্ব) – মৃত্যুর পর সেই অধিকার তার মা কিংবা আইনি উত্তরাধিকারীরা পাবেন বিষয়টা এমন নয়।

রুবা আহমেদ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে তার শুনানি শুরু হয়। প্রায় তিন মাস ধরে দীর্ঘ শুনানির শেষে বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল ও তালওয়ান্ত সিংয়ের বেঞ্চ আজ তাদের রায় ঘোষণা করলেন।

পরিচালক হানসাল মেহতা

ইতোমধ্যে তারা একাধিকবার বাদী ও বিবাদীপক্ষকে নিজেদের মধ্যে বসে আপোষ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে কোনও অগ্রগতি হয়নি।

পরিচালক হানসাল মেহতার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেছিলেন, যেহেতু হোলি আর্টিজানের ঘটনাটি ‘পাবলিক ডোমেইনে’ বা জনসমক্ষে ঘটেছে সেখানে একজন ব্যক্তিবিশেষের গোপনীয়তা বা প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়টিই অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর।

অন্য দিকে বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী অখিল সিবাল গত সপ্তাহেই সওয়াল করেন, “প্রথমত নির্মাতারা ভিক্টিমের পরিবারের কোনও ‘কনসেন্ট’ বা সম্মতিই নেননি। অথচ ভিক্টিমের পরিবারের সদস্যরা, মা-বাবা এখনও জীবিত আছেন। ”

তিনি আরও বলেন, “যেরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে তারা প্রাণ হারিয়েছেন, সেটাকে ব্যবসায়িকভাবে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করা হবে অথচ ভিক্টিমের পরিবারের কোনও মতামতই নেওয়া হবে না- এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”

তবে বিচারপতিরা আজ তাঁদের রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন ছবিটির বাণিজ্যিক মুক্তিকে তাঁরা কোনওভাবে বাধাপ্রাপ্ত করতে চান না – কিন্তু নিহতের পরিবারের অনুভূতিকে মর্যাদা দিয়ে তারা ছবিতে একটি নির্দিষ্ট ‘ডিসক্লেইমার’ও যোগ করতে বলেছেন।

‘ফারাজ’ ছবিটি ভারতে এখনও বাণিজ্যিক মুক্তি না-পেলেও লন্ডনের একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি গত বছর দেখানো হয়েছে।

গত ২৪শে জানুয়ারি সন্ধ্যাতেও দিল্লিতে প্রযোজনা সংস্থার তরফে ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বাছাই করা অতিথি, সিনেমা সমালোচক ও শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘ফারাজ’ ছবিটি তাদের দেখানো হয়।

এই ছবিটিকে ঘিরে ভারতের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মধ্যেও তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যার একটা বড় কারণ আদালতে এই ছবিটিকে নিয়ে চলা দীর্ঘ আইনি লড়াই।

ভারতীয় সিনেমার লেজেন্ড, প্রয়াত শশী কাপুরের পৌত্র জাহান কাপুরের অভিষেক হচ্ছে এই ছবিতে, তিনি ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফারাজ হোসেনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।

বলিউডের নামী অভিনেতা পরেশ রাওয়ালের ছেলে আদিত্য রাওয়াল এবং রাজ বব্বরের মেয়ে জুহি বব্বরকেও এই ছবিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ