বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রেলে অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতি, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

রেল খাতকে সেবামূলক বলা হলেও কতটুকু সেবা পাওয়া যায় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অথচ সেবার নামে চলা এ খাতে প্রতিবছর আয়ের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে। জানা গেছে, বিগত ১৩ বছরে রেলে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে আরও প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার। নতুন রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণ ছাড়াও ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক লোকোমোটিভসহ (ইঞ্জিন) ১৪২টি নতুন ট্রেন রেলবহরে যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান ৪৪টি ট্রেনরুট বর্ধিত করা হয়েছে। এতসব উন্নয়ন সত্ত্বেও রেল কেন লোকসান কমাতে পারছে না -এটাই প্রশ্ন।

বস্তুত প্রতিবছরই রেলে লোকসানের পাল্লা ভারি হচ্ছে। ক্রমাগত লোকসানের লাগাম টানতে ইতোমধ্যে দুবার রেলের ভাড়া বাড়ানো হলেও অবস্থার বিশেষ কোনো হেরফের হয়নি। এ অবস্থায় পুনরায় ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হলেও ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর সূদুরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা কেন রেলের হাতে নেই-এ প্রশ্নের সদুত্তর খোঁজা জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত এক যুগে রেলের প্রভূত উন্নয়ন হলেও সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এর সুফল মিলছে না। আশ্চর্যজনক হলো, যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে রেলের কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের উৎসাহের কোনো কমতি নেই। অভিযোগ রয়েছে, রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি চক্র একের পর এক এমন সব প্রকল্প গ্রহণ করছে, যার সঙ্গে সরকারি পরিকল্পনার কোনো মিল নেই। এছাড়া ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা বেড়ে গেছে, বেড়েছে রেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যাও। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধে এ প্রবণতা কঠোরভাবে দমনের পাশাপাশি সবাইকে জবাবদিহিতার আওয়া আনতে হবে। এত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও রেলক্রসিংগুলোকে নিরাপদ করতে না পারাও একটি ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

এছাড়া বিনা টিকিটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ না করা রেলের আরেকটি বড় ব্যর্থতা। দেশে আলাদা রেল মন্ত্রণালয় করা হলেও এতে অবস্থার কোনো পরির্বতন হয়েছে বলে মনে হয় না। সুলভ ও নিরাপদ বাহন হিসাবে মানুষ রেল ভ্রমণে স্বচ্ছন্দবোধ করে। অথচ লাগামহীন দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেল বিভাগ গণমানুষের প্রত্যাশা ও চাহিদা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। রেলওয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে লোকসান ও ক্ষতির বোঝা যে দিন দিন বাড়তেই থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। ক্ষতি এড়াতে বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার ও দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি রেলে উন্নত যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা হবে। আমরা আশা করি, সরকার এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ