শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রূপপুরের সরঞ্জাম নিয়ে রুশ জাহাজ ভিড়ছে ভারতের হলদিয়ায়

বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরঞ্জাম বয়ে আনা একটি রুশ জাহাজ বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে ভিড়তে না-পেরে এখন প্রতিবেশী ভারতের হলদিয়া বন্দরে মাল খালাস করতে যাচ্ছে।

বিবিসি জানতে পেরেছে, হলদিয়ায় মাল খালাস করার পর ওই সব সরঞ্জাম সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে স্থির হয়েছে।

এই রুশ জাহাজটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমেরিকার আপত্তির জেরে বাংলাদেশ সরকার সেটিকে তাদের বন্দরে ঢুকতে দেয়নি।

কিন্তু রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করছে, তাই এখন ভারতের একটি বন্দরকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ঘুরপথে নিজেদের দেশে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে।

গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘মেরিন ট্র্যাফিকের’ তথ্য অনুযায়ী, রুশ পতাকাবাহী ওই জাহাজটি বুধবার (৪ঠা জানুয়ারি) সকালেও ভারতে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। এর আগে বেশ কয়েকদিন জাহাজটিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা যায়।

ভারতের কলকাতা-হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্টের একটি সূত্র এদিন জানিয়েছে, চ্যানেলে কুয়াশার অবস্থা কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যেই জাহাজটি হলদিয়া বন্দরে ভিড়তে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনও রুশ জাহাজ ভারতের কোনও বন্দরে ভিড়লে সরকারের তাতে কোনও সমস্যা নেই।

গত ২৯ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলার এক নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাবে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, “এই রুশ জাহাজটির গতিবিধির ব্যাপারে আমার কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই, তবে এটি যদি ভারতের কোনও বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তাই!”

“তথাকথিত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল এখনও তাই – ভারতের সেই নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি”, জানান তিনি।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ভারত যে মোটেই আমল দিচ্ছে না, সেটা পরিষ্কার করে দিয়ে মি বাগচী আরও বলেন, “আজকের এই টেকনিক্যাল দুনিয়ায় কোনটা নিষেধাজ্ঞা, কোনটা নয় তা নিয়েও বহু বিতর্ক আছে। কিন্তু আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে পৃথিবীর যেখান থেকে আমরা সহজে তেল পাব সেখান থেকেই আনব, এটাই আমাদের নীতি। তেল ছাড়া অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে।”

উরসা মেজর নামে রুশ জাহাজটি যে এখন ভারতের একটি বন্দরে ভিড়ে মাল খালাস করছে – তা থেকে স্পষ্ট বাংলাদেশ সরকার ভারতের এই ‘ডিফায়ান্ট’ অবস্থানেরই কূটনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে।

রূপপুর প্রকল্প

এর আগে ‘উরসা মেজর’ নামে এই জাহাজটি গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের দিকে রওনা দিয়েছিল।

কিন্তু ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, এটি আসলে তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ নামে একটি রুশ জাহাজ, সেটির রং আর নাম পাল্টে ‘উরসা মেজর’ নামে চালানো হচ্ছে।

এই জাহাজটিকে বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে তা যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে, সেটাও তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।

এরপরই বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় উরসা মেজর-কে বাংলাদেশের মোংলা বা অন্য কোনও বন্দরেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তের কথা ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি-কেও জানিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর থেকেই ওই রুশ জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে মাঝসমুদ্রে ভাসছিল।

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য সৈন্যদের মোবাইল ফোনের ব্যবহারকে দায়ী করছে রাশিয়া

ইতিমধ্যে গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, রূপপুরের মতো একটি মেগা-প্রকল্পকে বাংলাদেশ সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

তিনি সেদিন আরও বলেন, “যে জাহাজে রূপপুরের মালামাল আসছে সেটি যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে তা আমাদের আগে জানা ছিল না। এখন জেনেছি, সে ব্যাপারে পদক্ষেপও নেওয়া হবে।”

সেই পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা তিনি স্পষ্ট না-করলেও এখন বোঝা যাচ্ছে ভারতের বন্দরে মাল খালাস করে সড়কপথে তা নিয়ে আসার মাধ্যমেই এই কূটনৈতিক জটিলতার অবসান করতে চাইছে বাংলাদেশ।

এদিকে এই জাহাজের মাল খালাসের ব্যাপারে জানতে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও বিবিসির তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তবে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তার কোনও জবাব দেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ