সোমবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আমতলীতে নবম শ্রেনীর ছাত্রের যুদ্ধ বিমান আবিষ্কার, বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্ন

আমতলী উপজেলার গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত দুইটি যুদ্ধ বিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার, মিসাইল ও যুদ্ধ জাহান তৈরি করেছেন। তার এমন সৃষ্টি কর্মে অভিভুত এলাকাবাসী। সিফাত একজন বৈজ্ঞানিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু অর্থ সংঙ্কটের কারনে সেই প্রতিভা বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। সরকারী-বেসরকারী ভাবে তাকে আর্থিক সহযোগীতা করলে তিনি তার সৃষ্টিশীল কাজে আরো এগিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা সিফাতের।

জানাগেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর রাওগা গ্রামের মোঃ বশির প্যাদার ছেলে সওকত ইসলাম সিফাত ছোট বেলা থেকেই নতুন নতুন আবিষ্কার কর্মে উৎসাহী ছিলেন। ২০২২ সালে একটি হাফিজি মাদ্রাসায় হেফজো বিভাগে ভর্তি হন। একবছর হেফজো শেষে তিনি ২০২৩ সালে চাওড়া পাতাকাটা মেহেরআলী দাখিল মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেনীতে লেখাপড়া করেন। ২০২৫ সালে গাজীপুর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয় নবম শ্রেনীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি নতুন সৃষ্টিশীল কাজে মনোনিবেশ করেন তিনি। নতুন নতুন আবিষ্কারই যেন তার নেশায় পরিনত হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে তিনি যুদ্ধ বিমান তৈরি উদ্যোগ নেন। দীর্ঘ তিন মাস প্রচেষ্টার পরে তিনি রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ মডেলের যুদ্ধ বিমান তৈরি করেন। ওই বিমান তিনি আকাশে উড়িয়ে এলাকার মানুষের কাছে খুদে বিজ্ঞানী উপাধি পান। তাকে এলাকার সময়ে বিজ্ঞানী বলে ডাকে। বাবা বশির প্যাদা ও মা চম্পা আক্তারের অনুপ্রেরনা এবং এলাকার মানুষের উৎসাহে তিনি আরো নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেন। এরপর তিনি দুই মাস চেষ্টা করে আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেলের যুদ্ধ বিমান তৈরি করেন। এরপর তিনি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার, মিশাইল ও যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করেছেন। সকল আরিষ্কারেই তিনি সফল হয়েছে। মা চম্পা আক্তার জানান, ছেলে সিফাত লেখাপড়ার চেয়ে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। সারাক্ষণ আবিষ্কারের নেশায় গবেষনাগারে পড়ে থাকে। ইতিমধ্যে তিনি দুইটি যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার ও যুদ্ধ জাহার আবিষ্কার করেছে। তার সবকটি আবিষ্কারই তিনি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। তার তৈরি বিমান আকাশে উড়ছে, যুদ্ধ জাহান পানিতে চলছে, রাডার ও মিশাইল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কিন্তু বাধ সেধেছে তার পরিবারের আর্থিক দন্য দশা। টিফিনের টাকা জমা করে এবং বাবা-মা ও প্রতিবেশীদের দেয়া অর্থ দিয়ে তিনি এগুলো আরিষ্কার করেছেন। এগুলো আবিষ্কার করতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অর্থ সঙ্কটের কারনে তিনি নতুন আবিষ্কারের প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না। সরকারী- বেসরকারীভাবে অনুদান পেলে তিনি নতুন নতুন আবিষ্কারে আরো এগিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।

সোমবার দুপুরে খুদে বিজ্ঞানী সওকত ইসলাম সিফাতের এমন সৃষ্টিকর্ম সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে। তিনি রিমোট কন্টোল সিস্টেম আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেলের যুদ্ধ বিমান আকাশে উড়িয়ে দেখান। এ যুদ্ধ বিমান তৈরিতে তিনি রিমোট, রিসিভার, বিএলডিসি মর্টার, সার্ভো মর্টার ও বেটারীসহ নানা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছেন।

জসিম প্যাদা ও জালাল মৃধা বলেন, ছোট বেলা থেকেই সিফাত নানান কিছু আবিষ্কার করে আসছে। ওর আবিষ্কার দেখে আমরাও অভিভুত। ওকে নতুন নতুন আবিষ্কারে উৎসাহী করি। তারা আরো বলেন, ওকে এলাকার সকলে খুদে বিজ্ঞানী বলে ডাকে।

খুদে বিজ্ঞানী সওকত ইসলাম সিফাত বলেন, মা ও বাবার অনুপ্রেরনায় টিফিনের টাকা জমিয়ে রাশিয়ার তৈরি মিগ-২৯ মডেল যুদ্ধ বিমান, আমেরিকার তৈরি এফ-২২ মডেল যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাডার ও মিশাইল তৈরি করেছি। তিনি আরো বলেন, আরো অনেক কিছু তৈরির পরিকল্পনা আছে। অর্থের অভাবে আবিষ্কার করতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, আমি বৈজ্ঞানিক হয়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কাজ করতে চাই।

কৃষক বাবা মোঃ বশির প্যাদা বলেন, ছেলের প্রতিভা দেখে অর্থের দিকে তাকাই না। অনেক কষ্ট হলেও সাধ্যমত অর্থ দিয়ে ওর সৃষ্টি কর্ম সচল রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু এখন আর পারছি না। আমার ছেলেকে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে সহযোগীতা করলে অনেকদুর এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।

গাজীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ শাহীন মাহমুদ বলেন, মেধাবী ছাত্র সওকত ইসলাম সিফাত ক্লাসের বাহিরে বিভিন্ন আবিস্কার নিয়ে গবেষনা করেন। তিনি ইতিমধ্যে যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ ও রাডার তৈরি করেছেন। তাকে প্রয়োজন মত বিদ্যালয় থেকে সহযোগীতা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন,সরকারীভাবে আর্থিক সহয়তা পেলে অনেক দুড়ে এগিয়ে যাবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। তার এমন উদ্ভাবনী সৃষ্টি কর্মের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগীরা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ