শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন মন্দির, মন্দিরের আশপাশ ও সড়কে হাজার হাজার দর্শনার্থী উপস্থিত হন। বিকাল ৩টার মধ্যে ওইসব এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। উদ্দেশ্য ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসবে অংশগ্রহণ।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠানটির শুভ উদ্বোধন হয় বেলা তিনটার দিকে রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমস্থ সড়কে। সড়কের দুপাশে বড় বড় তিনটি রথ এবং ছোট্ট ছোট্ট প্রায় ১৫টি রথ রাখা হয়। ট্রাকে ট্রাকে চলছিল ধর্মীয় সঙ্গীত, কীর্তন। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) ঢাকায় এই রথযাত্রার আয়োজন করে।
এর আগে সকাল ৮টায় বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে তিনটায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে ভারতীয় হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি গোকুল ভি কে উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। এছাড়া ইসকন নেতা সত্য রঞ্জন বাড়ই, বিমুলা প্রসাদ দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গোকুল ভি কে বলেন, বাংলাদেশে এ রথযাত্রা খুব সুন্দর এবং অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অসাধারণ। দুদেশের মধ্যে সংস্কৃতি এবং মানুষে মানুষে চমৎকার মিল রয়েছে। ভারত বাংলাদেশকে সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে। দুদেশের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। রথযাত্রার শুভ উদ্বোধন করেন গোকুল ভি কে।
রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রথযাত্রায় টহল দল, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফুট প্যাট্রল, রুফটপ পার্টি, হোন্ডা মোবাইল টিম, গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), সাদাপোশাকে গোয়েন্দা, সোয়াট, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও ট্রাফিক পুলিশ তৎপর ছিল।
রথযাত্রাটি স্বামীবাগ আশ্রম থেকে বিকাল ৩টা ৫ মিনিটে শুরু হয়ে রাজধানীর জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, পল্টন মোড়, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, পলাশী মোড় হয়ে সন্ধ্যা ছয়টা ২৩ মিনিটে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছায়। ওই সময় বিনা রাণী সাহার নেতৃত্বে রথযাত্রাটি গ্রহণ করা হয়। রথযাত্রা গ্রহণের সময় মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির নেতা বাসু দেব ধর, সন্তোষ শর্মা, সিনিয়র সাংবাদিক স্বপন কুমার সাহা, কাজল দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন।
৯ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকবে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামানায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, পদাবলি কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা পাঠ, ধর্মীয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।
এ বছর ঢাকাসহ সারা দেশে ইসকনের ১২৮টি মন্দির ও আশ্রমে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে ইসকনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।