দেশে ২০২৩ সালে আত্মহত্যা করা ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ দশমিক ২ শতাংশ ছিল নারী। এ সময় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। বেশিরভাগই অভিমান এবং প্রেমঘটিত কারণে বেছে নেন আত্মহননের পথ।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ‘২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। দেশের ১০৫টি জাতীয়, স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার তথ্য সংকলিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার আগের বছরের কাছাকাছি। ২০২২ সালে আত্মহত্যা করেন স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩২ জন শিক্ষার্থী। গত বছর আত্মহত্যা করা ৫১৩ জনের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ২২৭ জন (মোট শিক্ষার্থীর ৪৪ শতাংশ), কলেজ শিক্ষার্থী ১৪০ জন (২৭ শতাংশ), বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৯৮ জন (১৯ শতাংশ) এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রয়েছেন ৪৮ জন (৯ শতাংশের বেশি)। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষার্থী ২০৪ জন (প্রায় ৪০ শতাংশ) এবং নারী শিক্ষার্থী ৩০৯ জন (৬০ শতাংশের বেশি)।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৪৯ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন জানিয়ে আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, অভিমান ও প্রেমের সম্পর্কের মতো আবেগজনিত কারণে আত্মহত্যার হার বেশি, যা ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৭ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৯ বছর।
সংগ্রহকৃত তথ্য অনুসারে, গত বছর আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৯ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫ জন করে শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ জন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ জন, মেডিকেল কলেজের ৬ জন, নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৫ জন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন এবং অন্যান্য ১৫ জন।
তথ্য বিশ্লেষণ করে আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, এসব আত্মহত্যার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অভিমান। অভিমান থেকে আত্মহত্যা করেছেন ১৬৫ জন, ৩২ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া প্রেমঘটিত কারণে প্রায় ১৫ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে প্রায় ১০ শতাংশ, পারিবারিক কলহ থেকে ৬ শতাংশ, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এক শতাংশের বেশি, পড়াশোনার চাপের সম্মুখীন হয়ে প্রায় ৫ শতাংশ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে প্রায় ৪ শতাংশ, পাবলিক পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়ে প্রায় ২ শতাংশ, যৌন হয়রানির শিকার হয়ে প্রায় ৩ শতাংশ এবং অপমান বোধ করে প্রায় এক শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন।
আবেগ প্রকাশে আস্থার জায়গা না পাওয়ায় কম বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং নারীর প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি বলে মনে করেন বক্তারা। তাই আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা আনার ওপর জোর দিয়ে তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে হবে, যেন তারা কখনো নিজেদের বিচ্ছিন্ন অনুভব না করেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল ও ধৈর্যশীলতার পাঠ শেখানোসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।