শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মসজিদের অর্থ আত্মসাৎ:সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ ৫জনের বিরুদ্ধে দুদককে তদন্তের নির্দেশ আদালতের

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের অর্থ সম্পদ ও সরকারী অনুদান আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক, মহাপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত), সেগুন বাগিচা, ঢাকাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম এনামুল করিম’র আদালত (বুধবার, ১ মার্চ) এ নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শাহআলম ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: নুরুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ২৬ ফ্রেব্রুয়ারী খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য, পৌরশহরের লঞ্চঘাট সড়কের মো: আব্দুল হান্নান বেপারী বাদী হয়ে সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো: মাহবুবুর রহমান, সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া নাসরিন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ, সাব-রেজিষ্ট্রার সহ অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১০৭, ১০৯, ১২০(ক), ১৬৭, ৪০৫, ৪০৬, ৪০৮, ৪০৯, ৪১৫, ৪২০, ৪৬৩, ৪৭৭(ক), ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এর ৫(২) এবং ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন এর ২৭ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিবরনে বলা হয়, ০২ নং আসামী কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন এবং ০১ নং আসামী পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে এবং একে অপরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতায় উপজেলা প্রশাসনের সরকারি বরাদ্ধ, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৫০,০০০/- টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে ৩০,০০০/- টাকা মসজিদের উন্নয়নকল্পে গ্রহন করেন। কিন্তু উক্ত টাকা মসজিদের অনুকূলে জমা না করে এবং কোনরূপ উন্নয়নমূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা/নগদটাকা) কর্মসূচীর আওতায় ২য় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের নিমিত্তে ১ নং আসামীর নির্বাচনী এলাকা ১১৪, পটুয়াখালী-০৪ সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্ধকৃত ৫০,৬২,৫০০/- টাকা, কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠের অসমাপ্ত অংশ সমাপ্তকরণ ও মাঠ ফন্টাট সলিং প্রকল্পের নামে ১ও ২ নং আসামী ৫,০০,০০০/-টাকা বরাদ্ধ নিয়ে কোনরূপ কাজ না করে এবং মসজিদ ফান্ডে জমা না দিয়ে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) কর্মসূচীর আওতায় সংসদ সদস্যের অনুকূলে দুইশত মেট্রিকটন খাদ্যশস্য এর মধ্য থেকে কলাপাড়া কেন্দ্রীয় বড়জামে মসজিদের ঈদগাহ’র অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরন ও সোলার প্যানেল স্থাপন এর জন্য ৫০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রানালয় থেকে বরাদ্ধ দেয়া হয় যাহার তৎকালীন বাজারমূল্য প্রায় ১৫,০০,০০০/- টাকা ছিল। উক্ত বরাদ্ধকৃত ৫০ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য ১ নং ও ২ নং আসামী অন্যান্য আসামীগণের সহায়তায় মসজিদ অনুকূলে বিক্রিত অর্থ বা খাদ্য শস্য জমা না দিয়ে এবং কোনরূপ উন্নয়ন কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন।

ধর্ম মন্ত্রনালয় থেকে খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড়জামে মসজিদের ঈদগাহ মাঠ এর উন্নয়ন কল্পে বরাদ্দকৃত ২,৫০,০০০/- টাকা, ১ ও ২ নং আসামী গ্রহন করে অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় উক্ত টাকার কোনরূপ উন্নয়ন মূলক কাজ না করে আত্মসাৎ করেছেন। জেলা পরিষদ, পটুয়াখালী থেকে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে মসজিদের ঈমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমের আবাসস্থল ও ঈদগাহ মাঠ উন্নয়নের জন্য ৪,০০,০০০/- টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা মসজিদ কমিটির সদস্য (বর্তমানে প্রয়াত) মীর আবদুল বারেককে উত্তোলন করার ক্ষমতা দেয়া হয়, কিন্তু এ ৪ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে কোনরূপ কাজ না করে ১ ও ২ নং আসামী অন্যান্য আসামীদের সহায়তায় আত্মসাৎ করেছেন।

এসকল সরকারী অনুদানের স্মারক নম্বর, চেক নম্বর ও গ্রহনের তারিখ মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াকফ্ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ এর ৫৬ (১) ধারা মোতাবেক মসজিদের কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রিতে ওয়াকফ এর অনুমতি নেয়ার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করে ১১টি ছাপকবলা দলিলের মাধ্যমে ১ থেকে ৫ নং আসামী পরস্পর যোগসাজসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে মোটা দাগের এ অনিয়ম-দূর্নীতির বিষয়ে সাবেক মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান বলেন, ’মসজিদ নির্মান ও সম্পত্তি ক্রয়, বিক্রয়ে কোন ধরনের অনিয়ম-দূর্নীতি হয়নি। ইউএনও কমিটির সভাপতি। মিটিং করে তাঁর অনুমোদন নিয়ে সবকিছু করা হয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ