ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারি, ভাঙচুরের মধ্যে হওয়া ভোটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ-সমর্থিত সাদা প্যানেল। সর্বোচ্চ আদালতে আইনজীবীদের এ সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদের সব ক’টিতেই জয় পেয়েছে আওয়ামীপন্থীরা।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী সমিতির বর্তমান সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল এ নিয়ে টানা দুইবার সভাপতি-সম্পাদক পদে জয় পেলেন।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার আট হাজার ৬০৮ জন। এর মধ্যে প্রথম দিন ভোট পড়েছে দুই হাজার ২১৭, দ্বিতীয় ভোট পড়েছে এক হাজার ৯২০ ভোট। মোট ভোট পড়েছে চার হাজার ১৩৭ ভোট, যা মোট ভোটের প্রায় অর্ধেক। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় ভোট গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াই টায় আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, “এই মাত্র নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছি ।”
সভাপতি পদে একটি, সহসভাপতি দুটি, সম্পাদক একটি, কোষাধ্যক্ষ একটি, সহসম্পাদক দুটি, সদস্য সাতটি পদসহ মোট ১৪টি পদে এক বছর মেয়াদের জন্য সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন হয়ে থাকে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক পদে আবদুন নূর দুলাল প্রার্থী হন। নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে আইনজীবী এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সম্পাদক পদে প্রার্থী করা হয় রুহুল কুদ্দুস কাজলকে। সাদা-নীল পরিচিত প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলেন আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ।
নির্বাচনে তিন হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন সাদা প্যানেলের মোমতাজ উদ্দিন ফকির। নীল প্যানেলের সাপতি প্রার্থী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন পেয়েছেন ২৯৩ ভোট। আর সম্পাদিক পদে তিন হাজার ৭৪১ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছেন বর্তমান সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল। সাবেক সম্পাদক নীল প্যানেলের রুহুল কুদ্দুস কাজল পেয়েছেন ৩০৯ ভোট।
এছাড়া দুই সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেলের জেসমিন সুলতানা ও মোহাম্মদ আলী আজম, কোষাধ্যক্ষ পদে এম. মাসুদ আলম চৌধুরী, দুই সহ সম্পাদক পদে যথাক্রমে এ বি এম নূর-এ-আলম (উজ্জ্বল) ও এম হারুন-উর-রশিদ বিজয়ী হয়েছেন। সাতটি সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন সাদা প্যানেলের- মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মনিরুজ্জামান রানা, মো. সাফায়েত হোসেন সজীব, মো. নাজমুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ রুদ্র, শফিক রায়হান শাওন ও সুভাষ চন্দ্র দাস।
নীল প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে হুমায়ুন কবির মঞ্জু ও সরকার তাহমিনা সন্ধ্যা, সহসম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান মিলন ও মো. আব্দুল করিম, কোষাধ্যক্ষ পদে রেজাউল করিম প্রার্থী হয়েছিলেন। আর সাত সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছিলেন- আশিকুজ্জামান নজরুল, ফাতিমা আক্তার, ফজলে এলাহি অভি, ফয়সাল দস্তগীর, শফিকুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান আহাদ ও রাসেল আহমেদ। গত দুই দিনের (১৫ ও ১৬ মার্চ) ভোটের পক্ষে তাদের কোনো তৎপরতা ছিল না।
ভোটের প্রথম দিন গত ১৫ মার্চ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারপিট, ভাঙচুরের কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা পার পৌণে ১২টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়, চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার পুলিশি প্রহরায় নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় ভোট গ্রহণ, শেষ হয় বিকেল ৫টায়।
এ সময়ের মধ্যে আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দুপরে ও শেষ বিকেলে বিবাদে জড়ায়। স্লোগান-বিক্ষোভে মুখোমুখি হয়ে ধাক্কাধাক্কিও করেন। আইনজীবী সমিতি ভবন ঘিরে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও প্রথম দিনের মত মারমুখী হতে দেখা যায়নি তাদের।
সমিতির বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদকসহ সাতটি পদ আওয়ামীপন্থীদের দখলে। বাকি সাতটি পদে আছেন বিএনপিপন্থীরা। কমিটিতে কোনো পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির (২০২৩-২৪) নির্বাচনে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি গঠন নিয়ে মতানৈক্য হয়। ফলে দুই পক্ষ প্রথমে আলাদা উপকমিটি ঘোষণা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও পরে একমত হয়ে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি ঘোষণা করে। সাবেক বিচারক ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরীকে উপ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়।
কিন্তু গত ১৩ মার্চ মনসুরুল হক চৌধুরী উপকমিটি থেকে পদত্যাগ করলে ভোট গ্রহণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে নতুন আহ্বায়ক নিযুক্ত করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নির্বাচন পরিস্থিতি। গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় দুই পক্ষই নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক করা নিয়ে বিবাদে জড়ায়। পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে হাতাহাতিও জড়ান আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে সমিতির বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদক নেতৃত্বাধীন আওয়ামীপন্থীরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে আর সমিতির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও দুই সহসম্পাদক নেতৃত্বাধীন বিএনপিপন্থীরা আইনজীবী এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক ঘোষণা করে। শেষমেশ পুলিশি প্রহরায় মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন উপকমিটির অধীনে ভোট হয়। ফলাফলে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেল।