স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শত’ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়ে সমুদ্র উপকূলের এক একটি অজোপাড়া গাঁও এখন যেন এক একটি শহর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ’গ্রাম হবে শহর’ এটি এখন দৃশ্যমান উপকূলীয় জনপদে। একসময় উপজেলা সদরে খেয়া পার হয়ে আসতে যেখানে সময় লাগতো ৮/১০ ঘন্টা সেখানে এখন ব্রীজ, কালভার্ট ও পাকা সড়কের বদৌলতে সময় লাগছে মাত্র ২০-৩০ মিনিট। ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য চাষে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। গ্রামীন অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। কৃষক, জেলে, ক্ষুদ্র খামারী, মৎস্য চাষী তাদের কষ্টার্জিত উৎপাদন স্বল্প সময়ের মধ্যে বাজারজাত করে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। এককথায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উপকূলের গ্রামীন এলাকায় এলজিইডি টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার আলীপুর-চাপলি বাজার ১২ কি.মি. কার্পেটিং সড়ক সম্পন্ন হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে, বাবলাতলা বাজার-চাপলি বাজার ৭ কি.মি. কার্পেটিং সড়ক ৫.৫ কোটি টাকা, মহিপুর ২.১ কি.মি. কার্পেটিং সড়ক ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা, লোন্দা-ধানখালী ২.১ কি.মি. সড়ক ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা, লালুয়া-নীলগঞ্জ ২.৮ কি.মি. সড়ক ২ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা, মহিপুর মৎস্যবন্দর-বিপিনপুর-কোমরপুর ২ কি.মি. সড়ক ২ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা, ধানখালী-হাফেজপুর ৭৫০ মিটার সড়ক ৭২ লক্ষ টাকা, উত্তর চাকামইয়া ১ কি.মি. সড়ক ৯৩ লক্ষ টাকা, বড়বালিয়াতলি-ডালবুগঞ্জ ১ কি.মি. সড়ক ৯৮ লক্ষ টাকা, নীলগঞ্জ-পক্ষিয়াপাড়া ১ কি.মি. সড়ক ৮৭ লক্ষ টাকা এবং নীলগঞ্জ-টঙ্গিবাড়িয়া ১ কি.মি. সড়ক ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সমাপ্ত হয়েছে।
এছাড়া সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ২.২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ধূলাসার-পক্ষিয়াপাড়াহাট-বৌলতলি গ্রাম পর্যন্ত ৩ কি.মি সড়ক নির্মান কাজ শেষ হয়েছে, ১.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সুলতানগঞ্জ মাদ্রাসা-নীলগঞ্জ আবাসন খেয়াঘাট ২ কি.মি. সড়ক, ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে হাজীপুর রোডস্ এন্ড হাইওয়ে-হাজীপুর হাইস্কুল ১ কি.মি. সড়ক, ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইটবাড়িয়া ওয়াপদা সড়ক-ইটবাড়িয়া কমিউনিটি সেন্টার ১.২৫ কি.মি. সড়ক, ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আদমপুর ব্রীজ-নীলগঞ্জ ফতেহপুর ৬০০ মিটার সড়ক, ৪৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ-ফতেহপুর খেয়াঘাট ৬০০ মিটার সড়কের কাজ শেষ হয়েছে এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে।
এছাড়া প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীন সড়ক উন্নয়নে ১২ কি.মি. নতুন সড়ক নির্মান কাজ ও ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১.৫ কি.মি. সড়ক সংস্কার কাজের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এছাড়া লালুয়া-নীলগঞ্জ ৬ কি.মি. ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বরাদ্দ পেলেই দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করবে এলজিইডি।
সূত্রটি আরও জানায়, ১১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা সদরের সাথে ৭টি ইউনিয়ন সংযুক্ত করে কলাপাড়া-বালিয়াতলী-গঙ্গামতি সড়কের আন্ধারমানিক নদীর উপর ৬৭৭ মিটার শহীদ নজরুল ইসলাম সেতু, ৩.৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নীলগঞ্জ ও মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের সড়ক যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে পাখীমারা সড়কের ৭৩৫০ মিটার চেইনেজে মধুখালী খালের উপর ৫৪ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রীজ নির্মান কাজ শেষ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। শেষের পর্যায়ে রয়েছে ৩ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের মধুখালী খালের উপর ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রীজ।
এছাড়া ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক বহুতল ভবনের নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করেছে এলজিইডি। প্রাথমিক স্তরের শিশুদের স্মার্ট স্কুল ক্যাম্পাস ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি বাউন্ডারী ওয়াল সহ নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মান কাজের বাস্তবায়ন শেষ হয়েছে। ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টির কাজ চলমান রয়েছে এবং ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫টি নতুন ভবন নির্মান কাজের দরপত্র আহবান প্রক্রিয়াধীন। সংসদ সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দকৃত অর্থে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২টি মসজিদ ও মন্দির সংস্কার কাজ এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে শেষ হয়েছে। ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৫টির সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে, ৬০ লক্ষ টাকার কাজের দরপত্র আহবান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ২০টির এবং ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রাক্কলন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৪৭টি।
এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফয়সাল বারী পূর্ন বলেন, ’এলজিইডি গত ক’বছরে এ উপজেলায় শত’ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছে। এরপরও গ্রেটার পটুয়াখালী প্রজেক্ট থেকে ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছাড় পেলে কলাপাড়া উপজেলার অবশিষ্ট বাকী কাঁচা সড়ক পাকাকরন এবং বিভিন্ন খালের উপর যেসকল কালভার্ট, ব্রীজের প্রস্তাব ডিপিপির অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে সেগুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবো।’
কলাপাড়া ইউএনও মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ’বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোটা দক্ষিনাঞ্চল সহ সমুদ্র উপকূলীয় কলাপাড়ায় লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। পায়রা সমুদ্র বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাঁটি, সাবমেরিন ল্যান্ডিং ষ্টেশন সহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আরও একাধিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। এ মেগা প্রকল্প গুলো বাস্তবায়ন হলে এ এলাকার মানুষের জীবন ধারা পাল্টে যাবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। ’