প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই,তিনি এখন বাংলাদেশের আঠার কোটি মানুষের আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন।শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুনের কারণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।তিনি বাংলাদেশের গর্ব,অহংকার।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চলার এই পথ মোটেও মসৃন ছিলনা।১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটাতে হয়েছে।১৯৮১ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের মতো বিশাল একটি দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।দেশে ফিরে লক্ষ লক্ষ মানুষের সম্বর্ধনা সভায় বলেছিলেন, ‘আমি বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এসেছি।আপনাদের বোন হিসেবে,মেয়ে হিসেবে,আমি বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকতে এসেছি।বাবা,মা,ভাই সব হারিয়েছি।আপনারাই আমার পরম আত্মীয়।—আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে মুক্তির সংগ্রামে নামতে চাই।মৃত্যুকে ভয় পাইনা।’বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা সেদিনের প্রতিটি কথা অক্ষরে তিনি অক্ষরে পালন করে চলেছেন।তিনি আজও মানুষের কাছে তাদের প্রিয় ‘আপা’ হয়ে আছেন।তাঁকে ‘প্রিয় আপা’ কিংবা ‘মমতাময়ী মা’ হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ আপন করে নিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন।দেশের প্রায় পাঁচ কোটি জনগণ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে এসেছেন।খোলা বাজারে চাল বিক্রি(ওএমএস),টিসিভির মাধ্যমে নিত্য পন্য বিক্রি, ছাত্র-ছাত্রদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি,প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি,মাতৃকালীন ভাতা,বয়স্ক,বিধবা,দুস্থ ও নারী,প্রতিবন্ধী,চা- শ্রমিক,জেলে,হিজড়া সহ প্রতিটি সম্প্রদায়কে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বলয়ের মধ্যে এনেছেন। এছাড়া ক্যান্সার,কিডনি,লিভার সিরোসিস,জন্মগত হৃদরোগ,স্ট্রোক,থ্যালাসেমিয়া সহ জটিল রোগীদের আর্থিক সহায়তা,প্রতিবন্ধী মোবাইল থেরাপি ভ্যান চালু সহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করেছেন।কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছে গেছে।
প্রতিবছরই সামাজিক কর্মসূচির আওতা ও উপকারভোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে।সরকার ২৪ টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২৩ টি সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।যার কারণে দারিদ্র্যতা উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে।হতদরিদ্রের সংখ্যা পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।জনগণের মধ্যে একপ্রকার স্বস্তি বিরাজ করছে।
দেশের সকল মানুষের মাঝে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে নেয়া হয়েছে নানাবিধ কার্যক্রম।সড়ক,মহাসড়ক,রেল,মেট্রোরেল,উড়ালসড়ক,এলিভেট এক্সপ্রেসও,বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।একদিনে একশ সেতু কিংবা একদিনে একশ সড়ক উদ্বোধন মাধ্যমে পৃথিবীতে অনন্য রেকর্ড স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে পদ্মাসেতু নির্মান বাংলাদেশের ইতিহাস মাইলফলক হয়ে থাকবে।ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে।দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।ইন্টারনেট সেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে।ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে পরিনত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য এমন কিছু কাজ করেছেন যা অন্যরা কখনো ভাবেননি,কিংবা সাহস করেনি।মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারি রাজাকার,আলবদর,আলশামসদের বিচার ও রায় কার্যকর;বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির রায় কার্যকরে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা হয়েছে।কোনো প্রকার রক্তপাতহীন ভাবে অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি চুক্তি করে শান্তির জনপদে পরিনত করেছেন।ভারতের সাথে ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি,তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়া ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি করা,দীর্ঘ ছয় দশক পর বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল সমস্যার বাস্তবায়ন,২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি আদায়,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে ইউনেস্কোর দলিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।এসব কাজ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুধুমাত্র মাত্র বাংলাদেশেরই নেতা নন,তিনি গ্লোবাল বিশ্ব নেতায় পরিনত হয়েছেন।নানা কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় শেখ হাসিনার কথাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।তিনি বিশ্বের নির্যাতিত,নিপীড়িত,অসহায়,বঞ্চিত,অবহেলিত মানুষের কন্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।মায়ানমারের জাতিগত নিধনের মুখে পতিত হয়ে আসা ১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘মানবতার মা’ হিসেবে।এজন্যই ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডেকিন ইউনিভার্সিটির ‘সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশিপ’ তাঁকে ‘মানবতার চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদনে বলেছে,‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমান করেছেন যে নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁডানোর জন্য একটি বিশাল হৃদয়ই যথেষ্ট।বাংলাদেশ কোনো উন্নত রাষ্ট্র নয়,অফুরন্ত সম্পদ নেই দেশটির,তারপরও মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বমানবতার নেতৃত্ব দিয়েছেন।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।২০১১ ও ২০১৩ সালে শিশু,মাতৃ মৃত্যু হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পেয়েছেন ‘সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড,২০১৪ সালে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য ‘ট্রি অব পিস’,২০১৫ সালে পরিবেশ বিষয়ক ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’,২০১৬ সালে নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’,২০১৯ সালে জিএভিআই কর্তৃক ভ্যাকসিন হিরো,রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সহ বিশ্বের আরো অনেক মর্যাদাবান স্বীকৃতি পেয়েছেন।
ব্রিটিশ প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে এশিয়ার আয়রন লেডি হিসেবে অভিহিত করেছেন।পত্রিকাটি তাদের ব্যাখ্যায় বলেছে,শেখ হাসিনা চার বার সরকার গঠন করে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ও সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লৌহ মানবী মার্গারেট থ্যাচারকেও ছাড়িয়ে গেছেন।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়,২৭ কোটি মানুষের জনবহুল বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেশির ভাগ সময় জিডিপির বার্ষিক গড় হার ছিল সাত শতাংশ।সমকালীন বিশ্ব বিবেচনায় যা ছিল অভাবনীয় সাফল্য।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চতুর্থ মেয়াদে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন।উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে রাষ্ট্রনায়কে পরিনত হয়েছেন। শেখ হাসিনা এখন পুরো বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছেন।তিনি দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন।পুরো বাংলাদেশটাই তিনি পরিবার মনে করেন।তিনি শুধু দলের নয়,দেশের সম্পদ।
উন্নত,সমৃদ্ধ মাথা উঁচু করা বাংলাদেশের রূপকার দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জেষ্ঠ্য সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন।শুভ জন্মদিনে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কর্মজীবন প্রার্থনা করি।অবনতমস্তকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণতি জানাই।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ ।