বুধবার, ৩০শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আমলে নেবে সরকার

মুহাম্মদ ইউনূস

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে পদত্যাগে বাধ্য করা বা অপসারণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের প্রশ্নে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতেই বিষয়টাতে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

আলোচনায় একাধিক উপদেষ্টা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের ব্যাপারে ছাত্রদের দাবি রয়েছে। অন্যদিকে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বলছে, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং সেটা তারা চায় না। এ পরিস্থিতি আলোচনা করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। এর ফলে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে সচিবালয়ের নিজ দপ্তরে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকবেন কি থাকবেন না- প্রশ্নটি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো আইনি বা সাংবিধানিক প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং এর মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত আসবে। তবে রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’

পদ ছাড়ার চাপ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্যে আপাতত বঙ্গভবন ছাড়তে হচ্ছে না রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে! যদিও তাঁকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এখনও প্রশমন হয়নি। রাষ্ট্রপতি প্রশ্নে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও।

বুধবার দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বিএনপি এ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে ‘নতুন সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক জটিলতা’ সৃষ্টির বিপক্ষে দলীয় অবস্থানের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানায়। তবে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিএনপির এই অবস্থান প্রত্যাখ্যান করে পাঁচ দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন কত সময় টিকতে পারবেন, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মো. সাহাবুদ্দিনকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে নতুন মুখ খুঁজতে সরকারের তরফ থেকে নানামুখী তৎপরতা চালানো হয়েছিল। ছাত্রনেতারা ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি পদে আনতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যক্তিরও সন্ধান করা হয়। এমনকি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তিনি রাজি হননি বলে খবর বেরিয়েছে। এ ছাড়া নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে একাধিক গ্রহণযোগ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির নাম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন আছে।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আবারও আলোচনা হতে পারে। সেখানে আসতে পারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রাষ্ট্রীয় সফর শেষে শুক্রবার তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

মো. সাহাবুদ্দিনকে ‘পদত্যাগে বাধ্য করা বা অপসারণের জন্য নতুন পদক্ষেপে’ বিএনপি রাখঢাক না রেখেই তার অবস্থান জানিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ