হঠাৎ করেই রাতের আকাশ বর্নিল হয়ে উঠলো, আকাশে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে নানা রঙের ভেলা। দূর আকাশের দিকে সকলের চোখ। অনেকক্ষণ পর দেখা গেলো দুই একটি ভেলা ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে আসছে। আসলে এগুলো কোন রঙের ভেলা নয়। এগুলো হচ্ছে রঙ-বেরঙের ফানুস। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমায় সোমবার সন্ধ্যার পর পরই রাতের আকাশে এসব ফানুস উড়ানো হয়েছে। দিনভর এ উৎসবকে ঘিরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটার ২৮টি রাখাইন পল্লীতে ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। এ উপলক্ষ্যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে প্রতিটি বিহারে।
এদিকে ফানুস উৎসব দেখার জন্য রাখাইন পল্লীর আশপাশে উৎসুক লোকজন ভিড় করে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেনো না ঘটে সে জন্য রাখাইন পল্লীগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সূত্রে জানা গেছে, আষাঢ়ী পূর্ণিমাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শুরু হয়ে কার্তিকের এ পূর্ণিমাতে শেষ হয়। এ সময় বৌদ্ধবিহারগুলোতে তিন দিনব্যাপী গৌতম বুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এ প্রবারণা পূর্ণিমা। এই দিনে গৌতম বুদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতি বছরই এই সময় আকাশে ফানুস উড়িয়ে এবং ধর্মীয় নানা আয়োজনের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করা হয়। এই দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আর রাতের আকাশে ওড়ানো হয় নানা রঙের ফানুস। এই দিনে রাখাইনরা আপ্যায়ন, অভিলাষ পূরণ, ধ্যান শিক্ষা ও কর্মসম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিদিন সকালে পরিষ্কার পোশাকে বিভিন্ন বিহারে গমন করে।
রাখাইন জোমিন বলেন, প্রবারণা ঘিরে বৌদ্ধ বিহার গুলোতে চলছে নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান । এছাড়া রাখাইন পাড়াগুলো থেকে একের পর এক আকাশে উড়ানো হয় ফানুস। বর্তমানে প্রতিটি পাড়ায় বিরাজ করে উৎসব মুখর পরিবেশ।
রাখাইন যুবক ক্যাথান জানান, এ উৎসব ঘিরে রাখাইন পল্লীর প্রতিটি ঘরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বিহার গুলোতে চলছে ধর্মীয় আলোচনা। একই সাথে করা হয়েছে আলোকসজ্জা । ধর্মীয় চেতনায় নর-নারী, শিশু, যুবক-যুবতীরা নতুন পোশাক ও উন্নতমানের খাবার নিয়ে বিহারে গমন করছেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনকে আতিথেয়তায় পরিবেশন করা হয় বিন্নি চালের হরেক রকম পিঠা পুলি। দীর্ঘ একমাস ধরে রং-বেরংয়ের কাগজ এবং বাঁশের কঞ্চি দিয়ে দেড়শো ফানুস বানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাখাইন নেতা তেনান বলেন, আত্মশুদ্ধি ও অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরনে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। ফানুস এখন সার্বজনীন উৎসব। নানা পোশাজীবি, সকল ধর্মের লোকজন এ উৎসবে মিলিত হয়ে আনন্দ পায়।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জুয়েল ইসলাম জানান, যকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও নির্বিঘ্নে উৎসব পালন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।