মানবসেবার আড়ালে ভয়ংকর সব অপকর্ম করা ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। প্রাথমিকভাবে তিনি জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে মরদেহ দাফন করতেন মিল্টন। সিটি করপোরেশনের মৃত্যুসনদও নিজেই তৈরি করতেন। এভাবে রাতের আঁধারে প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফনের ভুয়া মৃত্যুসনদ নিজেই তৈরি করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তার স্ত্রীকেও আমরা ডাকবো এবং কেউ যদি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করে তাহলে তাকেও গ্রেপ্তার করব।
পুলিশের এ শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রাতের আঁধারে মরদেহ দাফন করতেন মিল্টন। সিটি করপোরেশনের সিল নিজেই মারতেন। সেই কাগজগুলো আমরা উদ্ধার করেছি। লাশ দাফনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সনদ সে নিতো না। নিজেই লিখে সই করতো। সিলসহ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
মিল্টনের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টনকে রিমান্ডে আনার পরে তার স্ত্রীকেও ডাকা হবে। তবে কোনো ভুক্তভোগী যদি মামলা করেন তাহলে তার স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করবো।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশ মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ। তার বাড়ি বরিশালের উজিরপুরে। তিনি তার বাবাকে পেটানোর কারণে এলাকাবাসী তাকে এলাকাছাড়া করে। এরপর ঢাকায় চলে আসেন।
তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তার স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং একাধিক মামলা হবে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা জঘন্য অপরাধ। প্রমাণ মিললে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, শিশুদের ওপর হামলা, আত্মীয়-স্বজন গেলে তাদের মারপিট এবং তার টর্চার সেল, সব কিছুই মামলার মধ্যে আসবে।
হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন ঢাকায় এসে শাহবাগের ফার্মেসিতে কাজ শুরু করেন। সেখানে ওষুধ চুরি করে ব্রিক্রির কারণে মিল্টনকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর একজন নার্সকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ স্থাপনের জন্য স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন।
এর আগে মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরাও। যদিও কয়েকটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন মিল্টন সমাদ্দার।