প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তুলতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেকারণে প্রতিটি বিভাগে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ‘শেখ হাসিনা আন্তঃব্যাংক ফুটবল টুর্নামেন্টের চুড়ান্ত খেলা উপভোগ শেষে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “খেলাধূলার জন্য ট্রেনিং করিয়ে উপযুক্ত করে গড়ে তোলাটা সবথেকে বেশি দরকার। সেজন্য বিকেএসপি আগে ঢাকায় ছিল এখন প্রত্যেক বিভাগে একটা করে করা হচ্ছে। যেখানে সাঁতার, আর্চারি থেকে শুরু করে ভারত্তোলন, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, গলফ, স্যুটিং, দাবা, অ্যাথলেটিক্স, ভলিবল সবধরনের খেলাধূলার যাতে একটা সুযোগ হয়, ট্রেনিং হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে ট্রেনিং পায় এবং আন্তর্জাতিক মানে যেন আমাদের খেলোয়াড়রা পারদর্শী হয়ে ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
ফাইনালে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ২-০ গোলের ব্যবধানে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসিকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে।
তিনি বলেন, যখনই আমি সরকারে এসেছি তখন থেকেই আমার প্রচেষ্টা বাংলাদেশটা যেন খেলাধূলার ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যায়। ছেলে-মেয়েরা এর প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হয়। কারণ, এটি যেমন সকলকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী করবে পাশপাশি এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক মনভাব গড়ে উঠবে এবং নিজেকে আরো উন্নত করার চেতনা জাগ্রত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেইসাথে খেলাধূলা, লেখাপড়া, সাংস্কৃতিচর্চা প্রভৃতির মধ্যদিয়েই নিজের দেশের যে একটা সংস্কৃতি, নিজের জ্ঞান, মেধা, মননকেও প্রকাশ করার সুযোগ পাবে সবাই। সেজন্যই খেলাধূলার ওপর আমরা অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।
সারাদেশে খেলাধূলার বিকাশ ও চর্চায় প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন বসে না থাকে। আর ছোটবেলা থেকে যদি চর্চা না হয় তাহলে কি করে উঠে আসবে।
তিনি এ সময় এদেশে মেয়েদের খেলাধূলায় এক সময় বাধা আসার প্রসঙ্গ টেনে বলেন তাঁর সরকারের উদ্যোগে দেশব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্মামেন্ট থেকে অনেক খেলোয়াড় উঠে আসছে যারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে দেশের জন্য মর্যাদা বয়ে আনছেন। খেলাধূলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশে^র কাছে তুলে ধরার কাজটাও করছে।
তিনি বলেন, এই খেলাধূলার মধ্যদিয়ে আমাদের একসময় আমাদের উপযুক্ত খেলোয়াড় গড়ে উঠবে। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধূলা করে আন্তর্জাতিক শিরোপাও নিয়ে আসতে পারবো। সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। সেজন্য আমাদের সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী ফাইনালে বিজয়ী এবং বিজিত ট্রফি এবং পুরস্কারের অর্থের চেক তুলে দেন এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের ফুটবলের সার্বিক উন্নয়নের ওপর একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়শন অব ব্যাংকস (বিএবি) এর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার স্বাগত বক্তৃতা করেন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী ২৭ এপ্রিল উদ্বোধন হওয়া টুর্নামেন্টের এবারের দ্বিতীয় আসরে অংশগ্রহণকারী ৩১টি দলের মার্চ-পাস্ট প্রত্যক্ষ করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপভোগ করেন।
অনুর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে ছেলে মেয়ে উভয় ক্ষেত্রে জাতীয় দল এখন ভাল করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আস্তে আস্তে ট্রেনিংয়ের মধ্যদিয়ে যখন উঠে আসবে তখন আমরাও পারবো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের নৈপুণ্য দেখাতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধূলায় জয় পরাজয়টা বড় কথা নয়। আজকে কেউ জয়ী হবে অন্যদিন অন্য কেউ। কিন্তু এরজন্য যে প্রতিযোগিতামুলক মনভাব, খেলাধূলার প্রতি আকর্ষণ এবং অনুরাগ এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশ আজকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সে ধারা অব্যাহত রেখেই আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিশ^ দরবারে এগিয়ে যাবে এবং উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।
তিনি বাংলাদেশ আয়োজক বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএবি এ ধরনের আরো খেলা এবং নতুন নতুন টুর্নামেন্টের আয়োজন করবে এবং এই খেলাধূলা যাতে সমগ্র বাংলাদেশ ব্যাপী প্রসারিত হয় সে ব্যবস্থা নেবেন। আমরা চাই খেলাধূলাসহ সবদিক থেকে আমাদের দেশ এগিয়ে যাক।
তিনি বলেন, খেলাধূলা, সংস্কৃতিচর্চা, সাহিত্যচর্চা এগুলো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কখনও হয় না। আর এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্যদিয়ে ফুটবলে একটি নতুন যুগের সূচনা হলো।
জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশের রক্তাক্ত স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার পর মাত্র ৩ বছর ৭ মাসে তাঁর শাসনকালে একটি যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি ক্রীড়াঙ্গণের উন্নয়নেও জাতির পিতার বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।
দেশে এবং সমগ্র বিশে^ ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয় খেলা উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, তাঁর দাদা ও বাবা ফুটবল খেলতেন এবং এখন নাতী নাতনীরাও খেলে। তাছাড়া, তাঁর ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল ফুটবল, ক্রিকেট, হকি সব খেলাতেই পারদর্শী ছিলেন।
ক্রীড়ানুরাগী এই প্রধানমন্ত্রী সময় পেলেই চলমান ‘ইউরো’ বা ‘কোপা আমেরিকা’ ফুটবলের খেলা দেখে থাকেন বলেও জানান।
তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে আজকে দেশের অর্থনীতিকে উন্নত করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, দারিদ্রের হার আমরা অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে এনেছি এখন ১৮ দশমিক ৭ ভাগ, অতি দারিদ্রের হার ২৫ ভাগের ওপর থেকে নামিয়ে ৫ দশমিক ৬ ভাগে এনেছি, ইনশাল্লাহ এইটুকুও থাকবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অতি দরিদ্র বলে কোন মানুষ আর থাকবে না। প্রত্যেক ভূমিহীন-গৃহহীনকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, বড় বড় জেলাগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বহুমুখি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করায় সারাদেশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার আওতায় এসেছে। ফলে, বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে।