সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মানুষের আত্মত্যাগের ঘটনা রাষ্ট্রীয়ভাবে নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে হবে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ডাক, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন ও ১৭ এপ্রিল মুজিব নগরে যে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল তার সবই ছিল স্বাধীনতার পথে ধারবাহিক ঘটনা।

আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজিত ‘অবিস্মরণীয় এক দিন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘বাঙ্গালি জাতির জীবনে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম। সেদিন সেখানে অনেক বিদেশি সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন। সব সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করে আমাদের দেশ গঠিত হয়েছে। সেসময় বি‌দে‌শি সাংবা‌দিক‌দের কার‌ণে মু‌জিবনগর সরকা‌রের ব্যাপক প্রচার হ‌য়ে‌ছিল। ফ‌লে আন্তর্জা‌তিক অঙ্গ‌নে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফে‌লে‌ছিল।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘যারা জন্মসনদকে স্বীকার করে না,তারা এদেশের সন্তান হয় কিভাবে? তারা বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারে কিভাবে? এই প্রশ্নের সমাধান হওয়া দরকার। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র চলছে। যা সত্যি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, ‘মুজিবনগর সরকারের কথা বলতে গেলে ৭ মার্চের কথা আসবে। সেই ৭ই মার্চের স্বাধীনতার ডাক পৌঁছে গিয়েছিল তখনকার অজপাড়াগাঁয়ে মেহেরপুরে। সেকারণেই আজকের ১৭ এপ্রিল। মার্চের ৩০ তারিখ থেকে ১৭ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত দেশের মুক্তিকামী মানুষের কোনো প্রকার স্বীকৃতি ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় গুন ছিলো তিনি মানুষকে খুব তারাতাড়ি কাছে নিতে পারতেন। এটা তার কোন রাজনৈতিক কৌশল ছিলোনা। আমি মনে করি আমরাও যদি মানুষের কাছে থাকি তাহলে আমরা মানুষের সমস্যা এবং সুখ দুঃখকে ভালো করে বুঝতে পারবো। বাংলাদেশ আজকে যে পর্যায় এসেছে তার জন্য অনেকেই বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমারা প্রচুর রক্তচক্ষু দেখিয়েছিলো। কিন্তু আমরা আমাদের নৈতিকতা, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দ্বারা সে সমস্ত রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে জয় নিয়ে এসেছি। আজকেও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন রক্তচক্ষু রাঙ্গাবেন। আমাদের সে দিকে তাকিয়ে লাভ নেই। আমরা আমাদের দেশের জন্য কাজ করলে এরাই থামতে বাধ্য হবে। আমরা সে কাজই করে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ এবারও আমরা বিজয়ী হবো।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসার ধারাবাহিকতায় আমরা একটি সমাজ গড়ে তুলবো যে সমাজে সবাই সুযোগ পাবে এবং আমরা পুরোপুরি দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারবো। আমাদের নতুন প্রজন্মকে এগুলো জানাতে হবে। পাশাপাশি তাদের ইতিহাস সম্পর্কেও সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে নতুন প্রজন্মকে বুঝতে হবে। আমরা সবাই মিলে-মিশে যদি দেশটাকে সামনে নিয়ে যেতে চাই অনেক অর্জন আমাদের পক্ষে সম্ভব।’

প্রধান বক্তার বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলা ও বাঙালির স্বপ্ন কখনই পূরন হত না। জাতির পিতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না।’

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে শংকা দু:খজনক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত রাখতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তি যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।’

নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সচেতন করার তাগিদ দেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যথাযথভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরতে না পারলে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশর আহবায়ক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তিদের কলকাতা থেকে আসার জন্য ৪০টি গাড়ি ব্যবহৃত হয়। গাড়িগুলোর ব্যবস্থা করেছিলেন নিহার চক্রবর্তী। তিনি সাংবাদিক বা রাজনৈতিক ব্যক্তি কেউই নন। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। এই ৪০টি গাড়ি যাদের কাছ থেকে তিনি নিয়েছিলেন তাদেরকে তিনি বলে দিয়েছিলেন দয়া করে ট্যাংকি ভরে তেল দিও যেন সারাদিন গাড়িটি চলতে পারে। ১৬ এপ্রিল রাতে কলকাতা প্রেসক্লাবে এই গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শন সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া কঠিন হবে না।’

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. রাশিদ আফসারী, সিনিয়র সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আবুল কালাম আজাদ সহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ