মার্কিন অর্থনীতিকে চরমভাবে আঘাত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস)। তবে প্রকাশ্যে নয় বরঞ্চ গোপনেই ওয়াশিংটনকে সাবধান করেছে রিয়াদ। সম্প্রতি ডিসকোর্ড সার্ভারে ফাঁস হওয়া একটি গোপন নথি ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে আসে। এ থেকে সৌদি আরবের এই হুঁশিয়ারি বার্তা সম্পর্কে জানা যায়।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সৌদি আরব সম্প্রতি তেলের উৎপাদন কমানোর যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে একদমই খুশি নয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ নিয়ে সৌদি আরবকে ‘খারাপ পরিণতির’ হুমকি দিয়েছিলেন। এরপরেই পাল্টা হুমকি দেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। বাইডেন প্রশাসন রিয়াদকে জানিয়েছিল যে, তারা যদি তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেয় তাহলে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করা হবে।
কিন্তু জবাবে ক্রাউন প্রিন্স এমবিএস বলেন, বাইডেন যদি সৌদি আরবকে শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে তারা মার্কিন সরকারের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখবে না। আর সৌদি আরবকে ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতি ভোগ করতে হবে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে ওপেক প্লাস জোট তেলের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছিল। এই জোটের নেতৃত্বে আছে সৌদি আরব ও রাশিয়া। দৈনিক তেলের উৎপাদন দুই মিলিয়ন ব্যারেল কমিয়ে আনার কারণে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল সে সময়।
এতে অসন্তুষ্ট হয় বাইডেন। তিনি প্রকাশ্যেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ দেখান। তাছাড়া ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে বিশাল অঞ্চল দখল করে নেয়ায় রাশিয়াকে শাস্তি দেয়ার জন্য অর্থনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকায় রাশিয়ার অর্থনীতি ধ্বসে পড়ার পরিবর্তে আরও শক্তিশালী হতে থাকে।
সেসময় সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছিলেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে মিলে সৌদি আরব যা করছে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে তাদের। তবে নির্দিষ্ট করে তিনি জানাননি যে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ঠিক কি ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় জো বাইডেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি যদি ক্ষমতায় আসেন তাহলে সৌদি আরবকে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে পরিণত করবেন তিনি।
তবে ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ভালই চলছিল বাইডেন প্রশাসনের। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর যদিও এই সম্পর্ক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়েছে। কয়েক দশক পূর্বের চুক্তি অনুযায়ী, সৌদি আরবের তেলের সরবরাহের বিনিময়ে দেশটিকে নিরাপত্তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাইডেন ও এমবিএসের মধ্যেকার ক্যামিস্ট্রি যে বেশ দুর্বল তা বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের লক্ষ্যে দেশটিতে তিন দিনের সফরে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এরমধ্যেই ওয়াশিংটনের ওই রিপোর্টটি প্রকাশিত হলো।