বান্দরবানের রুমায় অস্ত্রধারীদের হাতে অপহরণের শিকার সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনের সন্ধান এখনও মেলেনি। তাকে নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে পুরো পরিবার। অপহৃত ছেলের সন্ধানে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরছেন তার মা।
নেজাম কক্সবাজারের চকরিয়ার বিএমচর ইউনিয়নের বাক্যারপাড়া এলাকার মৃত ইমাম উদ্দিনের ছেলে। ২০১৫ সালে তিনি সোনালী ব্যাংকে যোগ দেন। ২০১৮ সালে পার্বত্য বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি শাখায় সিনিয়র অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে ২০২১ সালে ব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি ও রুমা শাখার দায়িত্ব পান। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে নেজাম তৃতীয়।
বুধবার রাতে নেজামের ছোট ভাই চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানার এসআই মিজান উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ভাইয়ের সন্ধানে আমি রুমাতে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাইনি। পরিবারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, মসজিদে ছিলেন ভাই। অস্ত্রধারীরা তাঁকে পেতে সেখানে মুসল্লিদের মারধর করে। ভাইও শুরুতে সাধারণ মুসল্লির মতো মার খান। পরে বাঁচতে কৃষি কর্মকর্তা পরিচয় দেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা আসল পরিচয় জেনে গেলে ভল্টের চাবির জন্য বেদম মারধর করে। চাবি না পেয়ে তাঁকে নিয়ে গেছে। আমার বৃদ্ধ মা হার্টের রোগী। খবর পেয়ে বান্দরবানে গেছেন; পাহাড়ে পাহাড়ে ছেলের সন্ধান করছেন। ভাইয়ের সঙ্গে আমরা মাকে নিয়েও উদ্বিগ্ন।
নেজামের স্ত্রী মাইছুরা ইশফাত বান্দরবান ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক। চাকরির সুবাদে বান্দরবান সদরে থাকেন তিনি।
মোবাইল ফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, চাকরির কারণে রুমায় সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন নেজাম। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার বান্দরবানের বাসায় এসে রোববার চলে যান। মঙ্গলবার ইফতারের পর আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। বাসার সবার খবর নিয়ে তারাবি পড়তে যাবেন বলে ফোন রেখে দেন। এর পর থেকে কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
বুধবার দুপুরে চকরিয়ার বিএমচর এলাকায় নেজাম উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি গিয়ে সুনসান নীরবতা দেখা যায়। একতলা বিশালাকার পাকা ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন নেজামের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম ও তাঁর মা নুরুন্নাহার বেগম। নেজামের অপহরণের খবর পেয়ে সকালে মাকে নিয়ে বান্দরবান গেছেন শহিদুল।
শহিদুলের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, বড় ভাইয়ের অপহরণের খবরে আত্মীয়স্বজন সবাই উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। সময় যত গড়াচ্ছে, চিন্তা তত বাড়ছে।
এদিকে নেজামকে অক্ষত উদ্ধার ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার দাবিতে বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় এ মানববন্ধন করে রুমা উপজেলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি সুকান্ত দেব বলেন, ‘আমরা চরম আতঙ্কে রয়েছি।’
রুমা থানার ওসি মো. শাজাহান জানান, বুধবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে উদ্ধারে কাজ চলছে।
বুধবার কথাগুলো বলছিলেন মসজিদের ইমাম নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২৪ বছর ধরে এ মসজিদে ইমামতি করছি। জীবনে কখনও এমন পরিস্থিতি দেখিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শতাধিক অস্ত্রধারী প্রথমে সোনালী ব্যাংকে হানা দেয়। ক্যাশিয়ারের কাছে থাকা চাবিতে ভল্ট না খোলায় ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনের সন্ধানে তারা পার্শ্ববর্তী মসজিদে যায়। সেখান থেকে তাঁকে ব্যাংকে নিয়ে আসে। কিন্তু চাবি না পেয়ে নেজামকে তুলে নিয়ে যায় তারা।