শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিজয়ের ৫১ বছরে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১সাল। এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাঙালি বীরের বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল।৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেখানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধেও প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তিরসংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই দিন সেই রেসকোর্স ময়দানেই (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে পরাজয় স্বীকার করে। এই দিনটি বাঙালির কাছে গৌরব,বীরত্ব ও আত্মমর্যাদার দিন।

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ। একটি আরেকটির পরিপূরক। মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া যেমন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সঠিক ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও পটভূমি একদিনে তৈরি হয়নি। পাকিস্তাান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালিদের ভাষা, সংস্কৃতি আর অর্থনৈতিক বৈষম্যেও উপর আঘাত আসে।বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অধিকার আদায়ের সংগ্রামে শুরু থেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে।’ ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের সুচনা হয়।৬৬-ছয়দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান,৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পরই স্বাধীনতার চুড়ান্ত রূপ নেয়।

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল বাহানা করে। বরং সময় ক্ষেপণ করে বাঙালিদের ওপর প্রতিশোধ নিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য জড়ো করতে থাকে। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ঘুমন্ত নিরস্র বাঙালির ওপর মানব সভ্যতার ঘৃণ্যতম গন হত্যা চালায়। এবং বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। এবং শেষ শত্রুটি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি দেশ মাতৃকার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০লাখ শহীদের রক্ত ও দু’লক্ষ মা-বোনদের সম্ভমের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশে ফিরে সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই দেশ গঠনে সকলকে আহবান জানিয়ে বলে ছিলেন,‘বাংলাদেশ আজ মুক্ত,স্বাধীন। কিন্তু আজ আমাদের সামনে অসংখ্য সমস্যা আছে, যার আশু সমাধান প্রয়োজন। বিধ্বস্ত বাঙলাকে নতুন করে গড়ে তুলুন। নিজেরা সবাই রাস্তা তৈরি শুরু করুন। যার যার কাজ করে যান। বাংলাদেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একটি লোককেও আর না খেয়ে মরতে দেয়া হবে না। সকলর কর্মের ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে হবে।’ বঙ্গবন্ধুর আহবানে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দ্রুতই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

১৯৭৫ সাথে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে অভিভাবক শূন্য করা হয়। মুক্তিযুদ্ধেও চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক বিভক্তি ঘটিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়। পাকিস্তানি কায়দায় সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মদদে ’৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত উগ্র সাম্প্রদায়িক তার বীজবপন করা হয়। যার কুফল আজও ভোগ করছে বাংলাদেশ।দীর্ঘ সময় সামরিক শাসন ও বিএনপির অপশাসনে বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে যায়।

বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই এসেছে। প্রতিষ্ঠার ৫১ বছরে এসে বাংলাদেশের অর্জন এখন আর কম নয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ ছিল দারিদ্র্য সীমার নিচে। এখন ৫০ বছর শেষে দারিদ্র্য সীমা ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১৪০ ডলার বর্তমানে যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮শত ২৪ডলার। আর্থ সামাজিক ও মানুষের প্রত্যাহিক জীবনে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, রেমিট্যান্স, মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধিও হার, নারীর ক্ষমতায়নসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ রোল মডেল। এক সময়ের খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ খাদ্যে উদ্বৃত্তের সক্ষমতা অর্জন করেছে। তৈরি পোষাক শিল্প আজ সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর।

বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি ট্যানেল,বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান, শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সেবা।

একাত্তরে যে কঠিন মূল্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, পঞ্চাশ বছরে এসে তার সোনালী ফসল ঘরে তুলেছে বাংলাদেশ। এক দিন যারা দেশটির অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিল, তারাই আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ আজ আপন দক্ষতায় উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে।

এক সময়ের তলাবিহীন ঝুঁড়ি আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার এক যুগের নেতৃত্বে উন্নয়নের রোল মডেল। অনুন্নত, দারিদ্র্য পীড়িত একটি দেশ কিভাবে উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে যেতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ।

লেখকঃ সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য সম্প্রীতি বাংলাদেশ।

ইমেইলঃ haldertapas80@gmail.com

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ