কুমিল্লায় যুবদল নেতা তৌহিদুর রহমান হত্যার বিচার দাবিতে লাশ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সকালে নিহতের নিজ গ্রাম সদর উপজেলার পাঁচথুবীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, আমার স্বামীর তো কোন অপরাধ ছিল না। কোনো সন্ত্রাসীও নয়। সেনাবাহিনী আমাকে আশ্বস্ত করেছিল আমার স্বামীকে কিছুই করবে না। আমার বিশ্বাসও ছিল তাদের ওপর। যে সেনাবাহিনী জুলাই-আগস্টে জনতার পক্ষে ছিল তারাই পুরো শরীরে এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন ও কারেন্টের শক দিয়ে তাঁকে হত্যা করলো। চার সন্তানকে কেন এতিম করা হলো। আমি এর বিচার চাই।
ইয়াসমিন নাহার বলেন, সেনাবাহিনীর পোশাক ছাড়াও ওই রাতে কিছু লোক সিভিলে ছিল। তাদের মুখ ঢাকা ছিল। তারা বলেছিল আমার স্বামীকে ফেরত দেওয়া হবে। সে নাকি অস্ত্র ব্যবসা করে। ভোর থেকে আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অনেকের কাছে গিয়েছি, মোবাইলে কথা বলেছি। তাকে পাইনি। সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার পর আবারও সেনাবাহিনীর লোকজন তাকে (স্বামী) গাড়িতে রেখে আমাদের ঘরে তল্লাশি করেছে। তখন আমার স্বামী অনেকটা অচেতন ছিল। পরে হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর আমাদের খবর দেওয়া হয়।
এ সময় কুমিল্লা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ আর্মির ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই, এই বিষয়টির একটি সুষ্ঠু বিচার হবে এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে যথাযথ সহযোগিতা করা হবে।’
সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসানের বরাত দিয়ে মুহাম্মদ রাশেদুল হাসান আরও বলেন, তৌহিদুল ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে কর্নেল মাহমুদুল হাসানের কথা বলেছেন। এ সময় তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার নিশ্চিত করা হবে বলে জানান। পাশাপাশি তার পরিবারের যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন, সেভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লায় যৌথ বাহিনী তুলে নেওয়ার পর হাসপাতালে যুবদল নেতা তৌহিদুর রহমানের লাশ পায় পরিবার। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যুর খবর পায় পরিবার। তবে কখন তার মৃত্যু হয়েছে সে তথ্য জানা যায়নি।
তৌহিদুর রহমান আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের পাঁচথুবী গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে ও ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক।
পরিবার সূত্রে জানায়, তৌহিদের বাবা চার দিন আগে মারা গেছেন। গতকাল তার বাবার কুলখানির অনুষ্ঠান ছিল। সে জন্য তিনি বাড়িতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি বাড়িতে আসে। তৌহিদুল ইসলামের কাছে অস্ত্র আছে-এমন অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন তিনি নাকি হাসপাতালে আছেন। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তার লাশ পাওয়া যায়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রোববার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন। সংসারে তার স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে।