দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার অংশ হিসেবে ভারত মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি ২০টি ব্রডগেজ (বিজি) ডিজেল লোকোমোটিভ বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে। ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব আজ বিকেলে এখানে রেল ভবন থেকে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্ত হন রেলপথ মন্ত্রী ইসলাম। অনুষ্ঠানে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সিইও এ কে লাহোতি, বোর্ডের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, রেলওয়ে বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ভারত সরকারের অনুদান সহায়তার এই ডিজেল লোকোমোটিভগুলি হস্তান্তরের মাধ্যমে ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়কার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ভারত পূরণ করলো।
বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রয়োজন অনুসারে, ভারতীয় পক্ষ এই লোকোমোটিভগুলি যথাযথভাবে পরিবর্তন করেছে। এই লোকোমোটিভগুলি বাংলাদেশে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী পরিচালনা করতে সহায়তা করবে বলে ভারতীয় রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হচ্ছে- সভ্যতা, সংস্কৃতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মেল বন্ধনের। তিনি বলেন, ‘দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ভারতীয় রেল সীমান্তের ওপারে রেল যোগাযোগের উন্নতি ও শক্তিশালীকরণ উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ‘এখন পর্যন্ত গেদে-দর্শনা, বেনাপোল-পেট্রাপোল, সিংহবাদ-রোহনপুর, রাধিকাপুর-বিরল এবং হলদিবাড়ি-চিলাহাটি নামে পাঁচটি ব্রডগেজ সংযোগ চালু রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আখাউড়া-আগরতলা ও মহিহাসান-শাহবাজপুরে আরও দুটি সীমান্ত রেল সংযোগের কাজ ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই তা সম্পন্ন ও চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তৃতাকালে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন তাদের সহায়তার জন্য ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, লোকোমোটিভ সরবরাহ বাংলাদেশে পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন উভয়ের উন্নতিতে সহায়তা করবে। রেলওয়ে খাতে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা দিন দিন আরও বাড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। ২০২০ সালের জুন মাসে ভারত সরকার বাংলাদেশকে অনুদান হিসেবে ১০টি লোকোমোটিভ প্রদান করেছিল।
দু’দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে তিন জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। সেগুলো হলো, কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস, কলকাতা-খুলনা বন্ধন এক্সপ্রেস এবং নিউ জলপাইগুড়ি-ঢাকা মিতালী এক্সপ্রেস। ভারতীয় সরকারী সূত্র অনুসারে, প্রতি মাসে প্রায় ১০০টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গত অর্থ বছরে বাংলাদেশে প্রায় ২.৬৬ মেট্রিক টন কার্গোপণ্য পাঠানো হয়। প্রয়োজনে ভারত থেকে রপ্তানিযোগ্য যেসব পণ্য আনা যায়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পাথর, ডিওসি, খাদ্যশস্য, চায়না ক্লে, জিপসাম, ভুট্টা, পেঁয়াজ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
২০২০ সাল থেকে পার্সেল কন্টেইনার এবং এনএমজি রেকগুলি পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হয়, যা সাধারণত কৃষি পণ্য, কাপড়, তৈরি পণ্য, হালকা বাণিজ্যিক যান এবং ট্রাক্টর বহন করে। সূত্র জানায়, জিও-সিন্থেটিক ব্যাগের একটি নতুন ট্রাফিক সবেমাত্র শুরু হয়েছে এবং গুজরাট থেকে ৩টি পার্সেল ট্রেন পাঠানো হয়েছে। সূত্র মতে, বাংলাদেশে রেল সেবা উন্নত করার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ভারত ২০২০ সালের জুলাই মাসে অনুদানের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ১০টি বিজি ডিজেল লোকোমোটিভ হস্তান্তর করেছে।