বাংলাদেশ আসিয়ান, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য কেন্দ্র এবং ব্যবসার সেতুবন্ধ হতে পারে।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি ড. যশোদা জীবন দেব নাথ গতকাল ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক অব ভিয়েতনামের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট ভুয়াং দিন হিউয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এ মন্তব্য করেন।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি বলেছেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে শীঘ্রই এলডিসি থেকে উত্তরণ লাভ করবে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর সাথে বেশ কয়েকটি এফটিএ ও পিটিএ স্বাক্ষর করার চেষ্টা করবে।
যশোদা আরো বলেন, ভিয়েতনামের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদার করা হলে বাংলাদেশ বিশেষ করে আসিয়ান সদস্যদের সঙ্গে নতুন বাজারে প্রবেশাধিকার পাবে। আসিয়ান অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক চায়। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভৌগলিক অবস্থানের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ আসিয়ানকে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন দিতে পারে।
তিনি বলেন, তাই, বাংলাদেশ আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের (আরসিইপি) জন্য আসিয়ানের সাথে একটি লাভজনক বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
ড. যাশোদা বলেন, “ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ উভয় দেশই ঐতিহাসিকভাবে সার্বভৌমত্বের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেছে। জাতি হিসেবে আমরা সহিষ্ণু, অধ্যবসায়ী এবং গতিশীল।”
তিনি বলেন, এ বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি এফবিসিসিআই দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
ড. যশোদা বলেন, রপ্তানি বাস্কেটকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে যৌথ উদ্যোগ বিনিয়োগের মাধ্যমে ভিয়েতনামের জনসংখ্যাগত ও প্রযুক্তিগত সুবিধা লাভের সুযোগ নিতে পারে।
ভিয়েতনামের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট ভুং দিন হিউ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
সম্প্রতি দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভিয়েতনামের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
ভিয়েতনাম বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং এফবিসিসিআই-এর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভিয়েতনাম সফর ও বাজার ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান। ভিয়েতনাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ভিসিসিআই) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে বাংলাদেশ সরকার এবং এফবিসিসিআইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
পরে হোটেলে ‘ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার উন্নয়নে নীতি ও আইন বিষয়ক ফোরাম’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি শমী কায়সার বলেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য অংশীদারিত্ব দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি বিশেষত্ব।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দ্বিমুখী বাণিজ্য ক্রমবর্ধমান প্রবণতা বজায় রেখে ২০২১-২২ সালে ১১০২.৭৭ মিলিয়নে ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৯২.৭৭ মিলিয়ন ডলার এবং ভিয়েতনাম থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ১০১০ মিলিয়ন ডলার।
ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনও তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেন, যদিও ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নেই, তবুও উভয় দেশই বাণিজ্যের ওপর জোর দিয়েছে এবং তাদের নিজ নিজ ব্যবসায়িক সম্প্রদায় এবং উদ্যোক্তাদের জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ অর্জনের জন্য সর্বোত্তম সম্ভাব্য পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
শমী কায়সার বলেন, “আমাদের এগ্রো এবং ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এখন রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের আরএমজি সেক্টর চীনের পরে বিশ্বে ২য় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। বিশ্বের শীর্ষ ১০টি সবুজ আরএমজি কারখানার মধ্যে শীর্ষ ৮টি বাংলাদেশে অবস্থিত। নবায়নযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে।”
তিনি ভিয়েতনামের উদ্যোক্তাদেরকে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক পার্ক, পর্যটনে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রদূত নগুয়েন মান কুওং, এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোঃ আলমগীর, ইন্টারন্যাশনাল উইংয়ের প্রধান রাষ্ট্রদূত মসয়ুদ মান্নান এবং বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের অন্যান্য ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।সূত্র: বাসস।