নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তাঁর স্ত্রী মাধবী দেবনাথের নগদ অর্থ ছিল মাত্র ২২ লাখ টাকা। ১৫ বছর পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকায়। টানা তিন মেয়াদে বরগুনা -১ (আমতলী-তালতলী-বরগুনা সদর) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর নগদ অর্থ বেড়েছে ২০ গুনের অধিক। আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকু অর্থে তলানীতে আছেন।
বরগুনা-১ আসনে শম্ভু ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু, আমতলী উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ছরোয়ার ফোরকান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
হলনামার তথ্যমতে, নদগ অর্থ, ব্যাংক জমা ও সঞ্চয়ে শীর্ষে আছেন বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। সবচেয়ে তলানীতে আছেন গোলাম সরোয়ার টুকু।
অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ১৯৯১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে আসছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা ছয়বার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ৫ বারই সংসদ সদস্য হয়েছেন ।
মধ্যখানে ২০০১ সালে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন। সবশেষ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের টানা তিনটি সংসদ নির্বাচনে বরগুনায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এক সময়ের উপ মন্ত্রী অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
২০০৮ সালে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তার স্ত্রী’র মোট নগদ টাকা, ব্যাংক জমা ও সঞ্চয় টাকা ছিল মোট ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৬০ টাকা। তিন মেয়াদে ২০ গুনেরও বেশি বেড়ে এখন শম্ভু ও তার স্ত্রী’র মোট নগদ টাকা, ব্যাংক জমা ও সঞ্চয় ও স্থায়ী আমান ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬১ হাজার ৫৭১ টাকা হয়েছে।
২০০৮ সালে দাখিলকৃত হলফনামায় এমপি শম্ভু নিজ নামে নগদ ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬০টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমান ৩ লাখ টাকা, স্ত্রী মাধবী দেবনাথের নামে সেভিংস ১২ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজ নামে নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ২০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৩ টাকা, স্থায়ী আমানত ৬ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়াও স্ত্রীর নামে ব্যাংক জমা ২ লাখ ১১ হাজার ৩৬৮ টাকা সঞ্চয়পত্রে ১২ লাখ টাকা জমা দেখিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শম্ভুর নামে নগদ ১ কোটি ২ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৫ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানত ৪৮ লাখ ২১ হাজার ৩৫৫ টাকা। এখানে তিনি সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে স্ত্রীকে সংযুক্ত দেখিয়েছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফ নামায় নিজ নামে নগদ ২ লাখ, ব্যাংকে জমা ৩ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার ৩৯২ টাকা, সঞ্চয় ৪৫ লাখ ও স্থায়ী আমানত ২২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়াও ও স্ত্রীর নামে নগদ ২৫ হাজার টাকা, ব্যাংক জমা ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৭১৪ টাকা ও স্থায়ী আমানত ৩১ লাখ ২৪ হাজার ৫১৮ টাকা জমা দেখিয়েছেন।
তাঁর কাছে মোট নগদ ৩০ হাজার টাকা আছে। ব্যাংকে অথবা সঞ্চয়পত্রে কোনো টাকা জমা নেই। তবে তাঁর স্ত্রীর সরকারি চাকরি থেকে বছরে ৫ লাখ টাকা বেতন বাবদ আয় আছে। তবে একমাত্র ছেলে সুনাম দেবনাথের কোনো আয় বা সম্পদের তথ্য দুটি নির্বাচনের কোনো হলফনামায়ই উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়াও এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর আমতলা সড়কে একটি ও বরগুনা সদর রোডে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন একটি বাড়ি থাকলেও হলফনামায় এসব বাড়ির কোনো তথ্য দেননি।
দ্বিতীয় অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান। তাঁর কাছে নগদ ৭৮ হাজার ৫৬৪ টাকা ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৮২ লাখ ২৩ হাজার ১০৪ টাকা আছে। তবে গোলাম ছরোয়ার ফোরকানের সঞ্চয়পত্রে কোনো টাকা জমা নেই। আরেক প্রাথী খলিলুর রহমানের নগদ টাকা আছে মোট ৫০ হাজার। তাঁর ব্যাংকে জমা আছে ৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। খলিলুর রহমানের স্ত্রী’র কাছে নগদ ২০ হাজার এবং ব্যাংকে ২ লাখ টাকা জমা আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকুর কাছে নগদ ৩০ হাজার টাকা আছে। ব্যাংকে অথবা সঞ্চয়পত্রে কোনো টাকা জমা নেই। তবে তাঁর স্ত্রীর সরকারি চাকরি থেকে বছরে পাঁচ লাখ টাকা বেতন বাবদ আয় আছে। প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন পেয়ে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টির খলিলুর রহমান, আওয়ামী লীগের তিনজন হেভিওয়েট স্বতন্ত্রসহ নাম সর্বস্ব দলের ছয়জন নাম লেখাতে এমপি প্রার্থী হয়েছেন।
নিউজফ্ল্যাশ /এসএ।