রবিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমিতে পাকা ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করলেন প্রশাসন

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোটি টাকার জমি দখল করে কবির মল্লিক ও লিবিয়া প্রবাসী লিটন হাওলাদারের পাকা ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খানের নির্দেশে এ কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। বাঁধ ধসে প্রাণহানী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবী এলাকাবাসীর। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার হলদিয়া অফিস বাজার এলাকায়।

জানাগেছে, ১৯৬৭ সালে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া এলাকায় ৫৪/বি পোল্ডারে ১০ একর জমি অধিগ্রহন করেছেন। বাঁশবাড়িয়া নদীর পাড়ের হলদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ, গবাদী পশু ও ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করেন। ওই এলাকার হলদিয়া অফিস বাজারে কবির মল্লিক ৬ শতাংশ এবং লিবিয়া প্রবাসী লিটন হাওলাদার ৫০ শতাংশ জমি দখল করে পাকা ইমারত নির্মাণ করছেন। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ওই বাজারের শতাধিক ব্যক্তি পাকা ইমারত গড়ে তুলেছেন। সরকারী কোটি কোটি টাকার জমি অবৈধভাবে দখল করে ইমারত নির্মাণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। উল্টো তারা দেখেও না দেখার ভার করছেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। দখলদাররা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুই পাশে ইমারত নির্মাণ করায় বাঁধ নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে ওই বাঁধ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে বাঁধ ধসে ওই এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী। মঙ্গলবার বিকেলে বাঁধ দখল করে পাকা ইমারত নির্মাণের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন হলদিয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহসিলদার সাদিক মিয়াকে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, কবির মল্লিক ও লিবিয়া প্রবাসী লিটন হাওলাদার ৫৬ শতাংশ জমি দখল করে পাকা ইমরাত নির্মাণ করছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। তারা আরো বলেন, হলদিয়া অফিস বাজারের বাঁধের জমি দখল করে শতাধিক ব্যক্তি অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। বাঁধ রক্ষায় দ্রুত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবী তাদের।

মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, কবির মল্লিক ও লিবিয়া প্রবাসী লিটন হাওলাদার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫৬ শতাংশ জমি দখল করে পাকা ইমারত নির্মাণ করছেন। কবির মল্লিক ও জুয়েল মল্লিক দাড়িয়ে থেকে ১০-১৫ জন শ্রমিক দিয়ে পাকা ভবনের ঢালাই কাজ করছেন।
দখলদার কবির মল্লিক বলেন, আমি বিএনপি করি। আমার ডিসিআরএর প্রয়োজন নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কাজ করছি। অনুমতির কাগজ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপরগতা প্রকাশ করেছেন।

লিবিয়া প্রবাসী লিটন হাওলাদারের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের তহসিলদার মোঃ সাদিক মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে অবৈধভাবে পাকা ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, তহসিলদার পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর যদি কাজ করেন দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হান্নান প্রধান বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি দখল করে পাকা ইমরাত নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাঃ সফিউল আলম বলেন, কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতি করে কেউ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ