শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের ২৫ বছরের পূর্তিতে পার্বত্য তিন জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচী পালিত হয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তারপরেও পাহাড়ে পুরোপুরি শান্তি ফিরে আসেনি। সেখানে শান্তি ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা দেশের প্রত্যেক নাগরিকের।
চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে-পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং নিয়ন্ত্রণাধীন ৩৩টি দফতর ও সংস্থার মধ্যে রাঙামাটিতে ৩০টি, খাগড়াছড়িতে ৩০টি এবং বান্দরবানে ২৮টি দফতর হস্তান্তর করা হয়েছে। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে গঠন করা হয়েছে ভূমি কমিশন। প্রত্যাগত ১২ হাজার ২২৩টি উপজাতি শরণার্থী পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। শান্তি বাহিনীর সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা করে ৭২৫ জনকে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক বিল-২০১০ সংসদে গৃহীত হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায়ই ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন দফতরে ক্ষুদ্র –নৃগোষ্ঠী ব্যক্তিদের কোটা অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তাদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার কাজ শেষ হয়েছে। ১৫টি ধারার আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৯টি ধারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শান্তি চুক্তির ৭২টি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিলো সরকারের ওপর। মাত্র একটি ধারা বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা ছিল জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও শান্তি বাহিনীর প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) ওপর। তা হলো-অন্য বাহিনীসহ সেখানকার সকল সশস্ত্র গ্রুপ ও উপগ্রুপের অস্ত্র সমার্পন করিয়ে সরকারের মূলধারা উন্নয়নের সাথে তাদেরকে যুক্ত করা। অথচ এই চুক্তির একটি শর্তই তারা (সন্তু লারমা) গত ২৫ বছরে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বরং পাহাড়ে সশস্ত্র গ্রুপের সংখ্যা ক্রমই বাড়ছে। এসব গ্রুপের গুপ্ত হামলায় সেখানকার সাধারণ নাগরিক, সেনা সদস্য ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রক্ত ঝরছে। এর পরিসমাপ্তি টানার সময় এসেছে। তিন পার্বত্য জেলার অধিবাসীরা সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা নিচ্ছে। এসব মূল্যায়নের এখন সময় এসছে।
২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি ও জনসংহতি সমিতি চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছে যায়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা, বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে সভাপতি ও শান্তি বাহিনীর প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।