পাঁচ লক্ষ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। এতে ভেঙ্গে পড়ছে উপজেলার সরকারী স্বাস্থ্য সেবা। চিকিৎসার জন্য মানুষ পটুয়াখালী ও বরিশাল চিকিৎসায় যাচ্ছেন। ৩১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। দ্রুত চিকিৎসক না পেলে আরো ভেস্তে যাবে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা। দ্রুত চিকিৎসক দেয়ার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল একটি, ১০ শয্যার একটি, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুইটি ও পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এতে উপজেলায় ৩১ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। ওই ৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। আরএমও ডাঃ ফায়জুর রহমান গত তিন মাস ধরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত রযেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন চিকিৎসক নেই।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক তানভির শাহারিয়ার ও হলদিয়া ইউনিয়ন ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক লুনা বিনতে হককে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে জোড়াতালি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন চিকিৎসকের পদ আছে। এর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। কুকুয়া ১০ শয্যা হাসপাতালে দুইজন চিকিৎসকের বিপরীতে চিকিৎসক নেই একজনও। গাজীপুর ও গুলিশাখালী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দুইজন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত নেই কেউই।
আড়পাঙ্গাশিয়া, কুকুয়া, চাওড়া, হলদিয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পাঁচজন চিকিৎকের পদ থাকলেও কোন চিকিৎসক কর্মরত নেই। উপজেলার পাঁচ লক্ষ মানুষের চিকিৎসায় মাত্র চারজন চিকিৎসক। চিকিৎসক না থাকায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পরেছে। তারা পটুয়াখালী ও বরিশাল চিকিৎসা করতে যাচ্ছেন। এতে গরীব ও অসহায় মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দ্রুত তারা আমতলী উপজেলায় চাহিদা মাফিক চিকিৎসক দেয়ার দাবী জানিয়েছেন।
অপর দিকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তিন মাস ধরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরেছে বলে হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে।
আমতলী উপজেলার কাউনিয়া গ্রামের জিয়া উদ্দিন জুয়েল বলেন, আমতলী হাসপাতালে শুধু নেই আর নেই। উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসকরা জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক নেই। আমরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসক দেয়ার দাবী জানান তিনি।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের আফজাল হোসেন শরীফ বলেন, চিকিৎসার জন্য আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম কিন্তু কোন ডাক্তার পাইনি। পরে পটুয়াখালী গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছি। এতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে।
কুকুয়া গ্রামের ফিরোজা বেগম বলেন, মুই ডাক্তার দ্যাহাইতে আমতলী হাসপাতালে গ্যাছিলাম কিন্তু যাইয়্যা কোন ডাক্তার পাই না। পরে মুই ডাক্তার না দ্যাহাইয়্যা চইল্ল্যা আইছি। মুই গরীর মানু মোরডে টাহা নাই। হেইয়্যার লইগ্যা পট্টাহালি ডাক্তার দ্যাহাইতে যাইতে পারি নাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, চিকিৎসক চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক না দিলে আমার কি করার আছে? আমি আমার চেষ্টা অব্যহত রেখেছি।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডাঃ প্রদীপ কুমার মন্ডল বলেন, আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক চেয়ে উর্ধŸতন কর্তৃপক্ষকে পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। আরএমও’র অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে দুই দফায় শোকজ এবং তার বেতন ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব কিছুই জানেন তারাই ব্যবস্থা নিবেন।