একাধিক হত্যাসহ দুর্নীতি মামলার পলাতক আসামি পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালী ডিবির ওসি মো. জসিম উদ্দিন।
এদিকে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের গ্রেফতারের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ব্যাপক ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। হাফিজ আল আসাদ তাঁর ফেসবুকে লেখেন-“পটুয়াখালীর সাধারণ মানুষ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো জবাব দিয়েছিল মহিউদ্দিনকে ভোট দিয়ে। সেই নির্বাচনে এক দুঃসাহসিক বিজয় এসেছিল। আমরা সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভয়ংকর সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে এবং পরিবর্তনের জন্য মহিউদ্দিনকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রেখেছিলাম। মহিউদ্দিনের গ্রেপ্তারকে সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না। ভবিষ্যতে তিনি নির্বাচনে অংশ নিন বা না নিন, তার আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীই প্রমাণ করে দেবে-মহিউদ্দিন নামের শক্তি কী জিনিস।”
আবার অনেকে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের দায়িত্বপালনকালের ছবি ও পটুয়াখালী পৌরসভার উন্নয়নের ছবি দিয়ে তাঁর গ্রেফতার নিন্দা করেছেন।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
গ্রেফতারের সময় মহিউদ্দিন ওই এলাকার জনৈক ব্যারিষ্টার আশিকুর রহমানের বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, গতবছরের ২৯ আগষ্ট ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন বাড্ডা এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে নিহত মো. সিরাজুল ইসলাম বেপারির খালাতো ভাই মো. হাসিবুল হাসান লাবলু। পরে আদালতের নির্দেশে বাড্ডা থানার অফিসারস ইনচার্জ মো. সাইফুল ইসলাম অভিযোগটি এজাহার হিসাবে একই বছর ১ সেপ্টেম্বর রুজু করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় মহিউদ্দিন আহমেদ ১৩ নম্বর আসামি।
এছাড়াও সরকারি খাল দখল করার অভিযোগে ২০২২ সালের ৬ অক্টোবর তৎকালীন নদী রক্ষা কমিশনের উপস্থিতিতে মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বেপারিবাড়ী এলাকার জুলফিকার আলী তালুকদারের ছেলে মাকসুদুর রহমানকে মারধর করেন। এ ঘটনার কয়েকঘণ্টা পর ঘটনাস্থল থেকে খানিক দূরে শ্মশানের মধ্য থেকে মাকসুদুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনার ৯ দিন পর ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাষ্টিষ্ট্রেট আদালতে মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ভাতিজা এনাহক হক তালুকদার। পটুয়াখালীর সিআইডিকে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দেন আদালত।
এছাড়াও মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে গত ৫ আগষ্টের পর ঢাকার দুদক অফিস থেকে পটুয়াখালী দুদক অফিসে দুর্নীতির দুটি মামলার তদন্ত চলমান আছে। দসম্প্রতি ঢাকার দুদক কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল পটুয়াখালীতে মহিউদ্দিনের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি সরেজমিন তদন্ত করে গেছেন। তার বিরুদ্ধে পটুয়াখালী এলজিইডি অফিসে দুদকের আরেকটি চিঠির তদন্ত চলমান আছে বলে জানা গেছে।