মঙ্গলবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নির্বাচনী ইশতেহারই হবে সরকার পরিচালনার মূল নীতি সচিবদের উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী

সংসদের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহায়তাসহ সচিবদের বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, জনগণ রায় দিয়েছে, দল নির্বাচিত হয়েছে। তিনি সরকার গঠন করায় নির্বাচনী ইশতেহারই হবে পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার মূল নীতি, দলিল। এই দলিল বাস্তবায়নে সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতে সব সচিব এবং সচিব পদর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ১৫-১৬ জন সচিব আলোচনায় অংশ নেন। ১১ জন সচিব সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। সভার নির্দিষ্ট কোনো আলোচ্যসূচি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা আমরা শুনতে চেয়েছি। আমাদের জন্য উনার নির্দেশনা কি সেটি আমরা জানতে চেয়েছি।’

জাতীয় নির্বাচনে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও সচিব এবং জনপ্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা সুসংহত হয়েছে।’ সচিবদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘দায়িত্ব পালনে আত্মপ্রত্যয়, আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান সম্মুনত রেখে যেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করি।’

সংসদ কার্যক্রমে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ করে প্রশ্নেত্তর পর্বে। প্রশ্নোত্তর লেখা বা সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর যেন যথাযথভাবে উপস্থাপন করি। যেদিন যে মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নোত্তর থাকবে সেদিন যেন ওই মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সংসদে উপস্থিত থাকেন। কর্মকর্তাদের সংসদ কার্যাবিধি সম্পর্কে জানাতেও বলেছেন। জনগণ রায় দিয়েছে, দল নির্বাচিত হয়েছে, তিনি সরকার গঠন করেছেন তাই নির্বাচনী ইশতেহারটাই হবে পাঁচ বছর সরকার পরিচালনার মূল নীতি, দলিল। এই দলিল বাস্তবায়ন করতে বলেছেন।

ইশতেহার বাস্তবায়ন সমন্বয়ের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ করবে। নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার কার্যক্রম আছে, ৩০০টির বেশি অঙ্গিকার আছে, সেটিকে ম্যাপিং করা হবে। এরপর কোন মন্ত্রণালয়ের কী কাজ সেটি চিহ্নিত করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেই কাজগুলো করবে। কাজগুলো যাতে ঠিকমত মনিটর করা হয় সেজন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, সিটিজেন চার্টার, রাইট টু ইনফরমেশন এবং সুশাসনের যেসব টুলস রয়েছে সেখানে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গিকারগুলো ইন্টিগেট করতে বলা হয়েছে। যাতে করে বাৎসরিকভিত্তিতে মনিটরিং করতে সুবিধা হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নজরদারি করতে বলেছেন। অনেক সময় দ্রব্যমূল্যের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসে, নিউজ আসে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে খুবই শক্তভাবে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব শুধু দুদকের নয়, প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও সচিবদেরও দায়িত্ব রয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে বলেছেন। বিশেষ করে ছিনতাই, কিশোরগ্যাং বা এ রকম যেসব অপরাধ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করে নজর দিতে বলেছেন। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় অহেতুক বাড়ানো যাবে না। এজন্য আগে থেকেই পূর্ণাঙ্গ প্ল্যান করে প্রকল্প নিতে হবে। প্ল্যানিং কমিশন একটি নতুন সফটওয়্যার করে সেটির পাইলটিং করছে। পাইলটিং শেষ করে দ্রুত সফটওয়্যারের আওতায় প্রকল্প নিতে হবে।’

প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘যে প্রকল্পগুলো জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে, জনগণ উপকার পাবে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। মূল লক্ষ্য হলো জনমানুষের অবস্থার উন্নতি। চলমান প্রকল্পগুলোও দ্রুত শেষ করতে হবে। মূদ্রাস্ফীতি জিডিপি গ্রোথের নিচে থাকতে হবে। এখনও বিরাট সংখ্যক ব্যক্তি আয়করের আওতায় আসেনি। তাদের আয়করের আওতায় আনা হবে।’

‘বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। অহেতুক যেন তারা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিনিয়োগ আসতে কোনো জটিলতা হলে তা যেন নজরে নেয়া হয়,’ যোগ করেন তিনি।

মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকায় নতুন বাজার খোঁজার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এক্ষেত্রে সহযোগিতার প্রয়োজন হলে যেন তা দেয়া হয়।’

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলেছেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে সেচ মৌসুমে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবে যেন সেচ মৌসুম বাধাগ্রস্ত না হয়, খেয়াল রাখতে হবে। সেচের ক্ষেত্রে সোলার এনার্জি ব্যবহার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, তার ধারাবাহিকতা থাকে, সাসটেইন থাকে সেদিকে খেয়াল রেখে নতুন প্রকল্প বা কার্যক্রম নিতে হবে। নতুন যে শিক্ষাক্রম নেয়া হয়েছে তা প্রচলিত শিক্ষাক্রম নয়। এই বাস্তবতা আমাদের মানতে হবে। আমরা যারা বিশেষজ্ঞ তারা প্রচলিত পাঠ্যক্রমে শিক্ষা পেয়েছি। নতুন যে পাঠ্যক্রম রচনা করতে হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষত লোক খুব বেশি আছে তা কিন্তু নয়, যারা আছেন, তাদের কাজ হচ্ছে- যদি কোনো ভুলভ্রান্তি, তথ্যগত বা কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় তাহলে দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেয়া হয়। কোনো গ্যাপ তৈরি হলে যেন যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়। গার্মেন্টেসের মতো সুযোগ-সুবিধা কৃষিজাত পণ্য, চামড়া এবং পাটজাত পণ্যে দিতে হবে।’

এছাড়া সরকারি অর্থ ব্যয়ে মিতব্যয়ী হওয়া ও অহেতুক ব্যয় না করা, কারিগরি শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, সার্ভিস সেক্টরে প্রশিক্ষণ, বইমেলা উপজেলা পর্যায়ে নেয়া, সরকারি চাকরিতে শূন্য পদ পূরণ ও সময়মতো পদোন্নতি, খাদ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, তিন ফসলি জমি কোনো অবস্থাতেই নষ্ট না করা, জলাধার ভরাট না করা, কোনো অবস্থাতেই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত না করা, সেচে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার, সামুদ্রিক ব্লকে গ্যাস অনুসন্ধান এবং পর্যটন শিল্পের প্রসারে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ