বরগুনার তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ রেজবি উল কবির জোমাদ্দারের গত ৫ বছর ব্যবধানে স্থাবর,অস্থাবর, ব্যাংক আমানতসহ সম্পত্তি বেড়েছে ১০১ গুণ। তার স্ত্রী সুমি আক্তারের সম্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৪৯ গুণ। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকার সুবাধে তিনি ও তার স্ত্রী গত পাঁচ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। অপর দুই প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬ গুণ এবং মনিরুজ্জামান মিন্টুর চারগুণ। দুই প্রার্থী রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও মোস্তাফিজুর রহমানের অধিক হারে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের ভাষ্য জনপ্রতিনিধি হয়ে গত পাঁচ বছরে জনগনের টাকা আত্মসাৎ করেই তারা এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন।
জানাগেছে, তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এরা হলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টু, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক। প্রার্থীদের হলফনামা ঘেটে জানাগেছে, রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার হলফনামায় যে তথ্য দিয়েছেন তা দেখে চোখ চরকগাছ হয়ে উঠার অবস্থা। ২০১৯ সালে চেয়ারম্যান হওয়ার পুর্বে তাঁর ব্যবসায় আয় ছিল ৫ লাখ ২৮ হাজার ৮৯ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৮ টাকা। যা গত পাঁচ বছরের তুলনায় ১১ গুণের অধিক। চেয়ারম্যান হওয়ার আগে তার অস্থাবর সম্পদ ছিলো ৫৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের পরিশোধিত ঋণসহ অস্থাবর সম্পত্তির পরিমান দাড়িয়েছে ৬ কোটি ৮ লাখ ২৫ হাজার ৫৪২ টাকা। যা আগের তুলনায় ১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থাবর সম্পত্তি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। যা বর্তমানে ২৮১ গুণ বেড়ে দাড়িয়েছে ৪ কোটি ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৮ টাকা। গত ২০১৯ সালের তার হলফনামায় ২ কোটি ৮৩ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৫ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে তিনটি ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ৮৯৬ টাকা। গত পাঁচ বছরে ঋণের চাপ কমেছে ৫৭ শতাংশ। গত ৫ বছর আগে তার মেসার্স পায়রা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করলেও এই বছর তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন মেসার্স ফাতেমা রাইস মিল ও মেসার্স পায়রা স্বমিল এন্ড টিম্বার। তবে নগদ টাকা,নিজের নামের বাড়ি ও গাড়ির কথা হলফনামায় উল্লেখ নেই। গত ৫ বছর আগে যে সব খাত থেকে কোনো আয় ছিলোই না। শূণ্য থেকে সেই সব খাতে বর্তমানে ব্যবসায় পুঁজি ২ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৪২ টাকা দেখানো হয়েছে। কৃষি খাতে বছরে আয় ১ লাখ ১৫ হাজার ২’শ টাকা। শেয়ার ও ব্যাংক আমানত ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৬৫ টাকা। পেশা থেকে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ থেকে বাৎসরিক আয় ৮১ হাজার ৫০৩ টাকা উল্লেখ করেছেন। তবে তার সর্বমোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১০ কোটি ৭৩ লক্ষ ৩৮ হাজার পাঁচ’শ আটত্রিশ। গত পাঁচ বছরে তার সম্পত্তি বেড়েছে ১০১ গুণ। অপর দিকে স্ত্রী সুমি আক্তার একজন ব্যবসায়ী। রৈশি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তার ব্যবসায় বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকা, নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ২৭ লাখ টাকা, ব্যবসায় পুঁজি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা,কৃষি জমি ২.৫০ একর জমি রয়েছে। যার মূল্য ২০ লাখ টাকা,অন্যান্য পরিসম্পদ ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। তার মোট টাকার পরিমাণ ৯৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময় রেজবি উল কবির জোমাদ্দার তার হলফনামায় স্ত্রীর নামে শুধু মাত্র নগদ ২ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। স্বামী উপজেলা চেয়ারম্যান রেজবি-উল-কবিরের পথ ধরে তিনি দু’হাতে টাকা কামিয়েছেন। তার স্ত্রীর গত ৫ বছর আগে কোনো আয় না থাকলেও গড়ে সম্পত্তি বেড়েছে ৪৯ গুণ। অভিযোগ রয়েছে রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে আইশোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে, সরকারী প্রকল্পসহ বিভিন্ন উপায়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অপর দিকে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুর ২০১৯ সালে তার হলফনামার স্থাবর অস্থাবর ও নগদ অর্থ মিলে সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫০ লক্ষ ৯১ হাজার ৫’শ টাকা। এ বছর হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন তার সমুদয় সম্পদের মুল্য দুই কোটি ১২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫’শ ১০ টাকা। অর্থ্যাৎ গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে চারগুণের অধিক। আরেক প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ২০১৯ সালে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে তার হলফনামায় তিনি মাত্র কৃষি জমি থেকে আয় উল্লেখ করেছে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। তার আর কোন আয়ের উৎস ছিল না। ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৯ লক্ষ ২০ হাজার ৫’শ টাকা। অর্থ্যাৎ গত পাঁচ বছরে তার সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬ গুণ। দুই প্রার্থী রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও মোস্তাফিজুর রহমানের অধিক হারে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের ভাষ্য জনপ্রতিনিধি হয়ে গত পাঁচ বছরে জনগনের টাকা আত্মসাৎ করেই তারা এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন।
ভোটার রাকিব ও কবির বলেন দুই প্রার্থী রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও মোস্তাফিজুর রহমান এতো টাকা কিভাবে আয় করলো?। চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান থেকে তো এতো টাকা আয় করায় কথা না। অবশ্যই তারা অবৈধ পথে জনগনের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এতো টাকা আয়ের উৎস প্রশাসনের ক্ষতিয়ে দেখার দাবী জানান তারা।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজবি উল কবির জোমাদ্দার অবৈধ পথে আয় করার কথা অস্বীকার করে বলেন, বাবা ও মা মৃত্যুর পরে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া সম্পদের কারণে সম্পত্তি বেড়েছে। এছাড়া বৈধভাবে ব্যবসা করে এ সম্পদের মালিক হয়েছি। আমার হলফনামায় সব কিছু উল্লেখ করা আছে।
তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, বৈধ পথে আয় ও বাবার থেকে পাওয়া সম্পদ থেকে এতো টাকার মালিক হয়েছি। ভাইস চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় কোন ক্রমেই অবৈধ পথে টাকা আয় করিনি।
তালতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেন, জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমার সম্পদ মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমিতো গত পাঁচ বছরে উপজেলার কোন গুরুত্পুর্ণ দায়িত্ব পালন করিনি। ব্যবসা করে বৈধ পথে আয় করেছি।