বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে গত রোববার চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর সংলগ্ন বিমান বাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকে অবতরণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান। যা নিয়ে দেশে-বিদেশে চলছে বহুমাত্রিক আলোচনা। এতে নজর রাখছে দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশ। বিশেষ করে মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। কেননা, মার্কিন বিমান সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস সেখানেই অবতরণ করেছে এবং সামরিক মহড়াগুলো সেখানেই হচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের এক খবরে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক মহড়া ওই অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রভাব বিস্তারের লক্ষণ।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এরপর ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কথিত আছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউনূসের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ থাকায় সামরিক নড়াচড়ায় বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে ওয়াশিংটন। এ বছরের জুলাই মাসে যৌথভাবে টাইগার লাইটনিং নামক একটি সামরিক মহড়া পরিচালনা করে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে দুই দেশের সেনারা যৌথভাবে সন্ত্রাসবিরোধী অপারেশন এবং জঙ্গল অভিযান পরিচালনা করে। আগস্ট মাসে টাইগার শার্ক নামের আরেকটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মার্কিন বিশেষ বাহিনী অংশ নেয় এবং দেশটির অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই মহড়া চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিমানটি চট্টগ্রামে অবতরণ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির নির্দেশক।
ফার্স্টপোস্টের খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এবং এটি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কাছে অবস্থিত। এ কারণে চট্টগ্রাম একটি কৌশলগত এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়, যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মার্কিন বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনা এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে নজরদারি প্রতিষ্ঠার সুবিধা প্রদান করে। বিশেষত মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন উভয়ই সেখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্তে মার্কিন সামরিক সহায়তার একটি করিডোর তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল, যদিও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এতে সায় দেয়নি।
ফার্স্টপোস্টের দাবি বাংলাদেশে চীনের প্রভাবও বাড়ছে। বাংলাদেশ সরকার চীনের কাছে তিস্তা নদী প্রকল্প হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পূর্বে ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ছিল। পাশাপাশি, বাংলাদেশের বিমান বাহিনী চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে। এই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের প্রতি চীনের কৌশলগত আগ্রহের একটি ইঙ্গিত দেয়। যা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ভারত। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনা শক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাংলাদেশকে এক কঠিন অবস্থানে ফেলেছে, যেখানে দেশটি বড় শক্তির প্রভাবের মধ্যে পড়ে রয়েছে। বাংলাদেশে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি এবং চীনের কৌশলগত বিনিয়োগ ভারতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের অংশগ্রহণে শুরু হয়েছে সাতদিনের যৌথ মহড়া। এ কারণেই চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন মার্কিন সেনারা। গত রোববার এই মহড়ার উদ্বোধন করেন জহুরুল হক ঘাঁটির এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহ। এতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।