পাঁচ সন্তানের জনক বৃদ্ধ পিতা শানু মৃধা ছাগলের খোয়ারে বসবাস করছেন। খাবার চাইলেই পাষন্ড ছেলে সুলতান মৃধা বাবাকে মারধর করছে। অর্ধাহারে অনাহারে ছাগলের সাথেই তার বসবাস করতে হচ্ছে। পাষন্ড ছেলে সুলতানকে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম তার বাবার ভরণ পোষণ ও ভালো স্থানে বসবাসের নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না তিনি। উল্টো তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে কটাক্ষ করছেন। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার উত্তর কুকুয়া গ্রামে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী পাষন্ড ছেলে সুলতানের শাস্তি দাবী করেছেন।
জানাগেছে, উপজেলার উত্তর কুকুয়া গ্রামের বৃদ্ধ শানু মৃধা এক কানি সম্পতির মালিক ছিলেন। গত এক বছর পুর্বে বড় ছেলে বাবার সমুদয় সম্পতি লিখে নেন এমন অভিযোগ বাবার। পরে ঘরের পাশে একটি ছাগলের খোয়ারে তাকে থাকতে দেয়। বৃদ্ধ বাবা অভিযোগ করেন ছেলে সুলতান তাকে ঠিকমত খাবার ও চিকিৎসা দেন না। প্রতিবেশীদের দেয়া খাবার খেয়ে তিনি বেঁচে আছেন। খাবার চাইলে গেলেই বড় ছেলে প্রায়ই তাকে মারধর করছে। বৃদ্ধ বাবা ছাগলের খোয়ারে অর্ধাহারে অনাহারে ছাগলের সাথেই বসবাস করছেন। চিকিৎসার অভাবে রুগ্ন অবস্থায় জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়ে বেঁচে আছেন। চলাফেরা করতে পারেন না। এ ঘটনা স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে জানায়। তিনি পুলিশ পাঠিয়ে ছেলে সুলতানকে বাবার ভরণ পোষণসহ ভালো স্থানে বসবাসের নির্দেশ দেন। কিন্তু পাষন্ড ছেলে ইউএনওর কথা মানছেন না। উল্টো তিনি ইউএনওকে কটাক্ষ করছেন বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীরা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সুলতান তার বাবার প্রতি অবিচার করে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, খাবার চাইলে প্রায়ই ছেলে সুলতান বাবাকে মারধর করে। আমরা এর বিষয়ে কিছু বললেও সে আমাদের গালাগাল করে। তারা আরো বলেন, বড় ছেলে জমি লিখে নেয়ার কারনে তার আরেক ছেলে লিটন অন্য গ্রামে বসবাস করে, সেও বাবার খোঁজ খবর নেয় না।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, বৃদ্ধ শানু মৃধা একটি ছাগলের খোয়ারে নোংরা অবস্থায় বসে আছেন। তার পাশে ছাগল ছুটাছুটি করছে। মানুষ দেখলেই হাউমাউ করে কেঁদে দেয় আর খাবার চায়। শরীর ও ঘর থেকে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। নাখ চেপে মানুষকে বৃদ্ধের কাছে যেতে হয়। মল-মুত্র ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ওই মল-মুত্রের মধ্যে তিনি বসবাস করছেন। কেউ তার নোংরা পোশাক পরিষ্কার করছে না।
বৃদ্ধ শানু মৃধা হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, মোর পোলায় মোরে ভাত দেয় না। ভাত চাইলে মোরে এ্যাকছেন মারে। কাগজে টিপ নিয়ে জাগাজমি লেইখ্যা লইয়্যা গ্যাছে।
পাষন্ড ছেলে সুলতান মৃধার স্ত্রী নিলুফা বেগম জমি লিখে নেওয়া ও খাবার না দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার শ্বশুর জীবনে অন্তত ২০ টি বিয়ে করেছেন। বিয়ে করতে গিয়ে সকল জমিজমা মানুষের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিছু জমি ছিল তাও বিক্রি করতেছিল। ওই জমিটুকু আমার স্বামী টাকা দিয়ে কিনে রেখেছেন।
তিনি আরো বলেন, আমার শ্বশুর মানষিক রোগী কথা শুনে না। তাই আমার স্বামী মাঝে মধ্যে একটু গালমন্দ করেন। পুলিশ-প্রশাসন আসলেও কি হবে তারাতো খাবার দিয়ে যায় না। আমাদেরই তো সব করতে হয়। তাদের কথা শুনলেই বা কি আর না শুনলেই বা কি?
কুকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন মাসুম তালুকদার বলেন, সুলতান একজন দুষ্টু প্রকৃতির লোক। তাকে বারবার বলা সত্ত্বেও বাবার ভরণ পোষণ দিচ্ছে না। উল্টো বাবার সাথে খাবার আচরণ করছে।
তিনি আরো বলেন, শুনেছি সুলতান বাবার জমিজমা লিখে নিয়ে গেছে।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। ইউএনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ছেলে সুলতানকে ডেকে বৃদ্ধের ভরণ পোষণসহ ভালোভাবে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি সুলতান বাবার ভরণ পোষণ ও যত্ন না নেয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।