চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন কাল রোববার ঢাকায় শুরু হচ্ছে । এ সম্মেলনে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পেয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আজ শনিবার বিকেলে সচিবালয়ে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৪’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সম্মেলনের বাজেটের বিষয়ে এই মুহূর্তে জানাতে পারছি না। তবে সর্বনিম্ন খরচে আমরা সম্মেলন অনুষ্ঠান করি।’
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সম্মেলনটি প্রায় প্রতি বছর করা হয়। কিন্তু এবার কততম সম্মেলন হচ্ছে সে বিষয়ক প্রশ্নের উত্তরও জানাতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের মতো এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মূল ভেন্যু রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন।
সরকারের নীতি-নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনাসামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এবার সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন হবে। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য অধিবেশন ২৫টি। এ ছাড়া একটি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, স্পিকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ নিয়ে একটি ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ, নির্দেশনা গ্রহণ এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে দুটি অধিবেশন হবে। কার্য অধিবেশনগুলোতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের মন্ত্রী/উপদেষ্টা/প্রতিমন্ত্রী/সিনিয়র সচিব/সচিবরা উপস্থিত থাকবেন।
এবার সম্মেলনে মোট ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অংশ নেবে। অন্যান্য বছর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একটি সেশন থাকলেও এবার রাষ্ট্রপতি বিদেশে প্রোগ্রাম থাকায় সেটি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
এবার জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৬টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোতে জনসেবা বাড়ানো, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনের বিকাশ, আইন-কানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশি সংখ্যক প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সংক্রান্ত। এ সংক্রান্ত মোট প্রস্তাব ২২টি।’
সম্মেলন শেষ হবে ৬ মার্চ।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয় ও মাঠের বাস্তবতা অনুধাবনের লক্ষ্যে প্রতিবছর হয়ে থাকে ডিসি সম্মেলন। রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের ডিসি সম্মেলন, যা চলবে চার দিন।
ডিসি সম্মেলনে মাঠ পর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, সুপারিশ ও দাবি উপস্থাপন করেন জেলা প্রশাসকরা। টানা বৈঠক আলোচনায় প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আসে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। সম্মেলনে কথা বলেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ অন্য দায়িত্বশীলরা। এছাড়া এবারই প্রথম ডিসি সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসি সম্মেলন-২০২৪-এর উদ্বোধন করবেন এবং ভাষণ দেবেন। তবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবার ডিসি সম্মেলনে থাকছেন না। সম্মেলন শুরুর আগেই তিনি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্য সফরে যাবেন।
গত বছর এই সম্মেলন তিন দিন হলেও এবার ৩ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের সম্মেলনে ৫৬টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কার্যালয় ও সংস্থা সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রায় ৩৫০টি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন জেলা প্রশাসকগণ। গত বছর এই প্রস্তাবের সংখ্যা ছিল ২৪৫টি। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার একশর বেশি প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। প্রতিবছর বেশির ভাগ প্রস্তাব থাকে ডিসি ও ইউএনওদের ক্ষমতা বা দায়িত্বের পরিধি বাড়ানো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসংক্রান্ত। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন ও পরামর্শ দেবেন। এ জন্য সম্মেলনের প্রথম দিন আগামীকাল রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘উন্নয়নে মাঠ প্রশাসন’ শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এর মধ্য দিয়ে (সাবেকদের অংশগ্রহণ) সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে একটা আন্তঃসংযোগ তৈরি হবে। এতে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন। প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। এতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপকৃত হবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. আমিন উল আহসান বলেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের সঙ্গে আলোচনাসভার বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিব নিজেই দেখভাল করছেন। এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রস্তাব এসেছে। এসব প্রস্তাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা হবে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের। প্রথম কার্য অধিবেশন হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। এবারের ডিসি সম্মেলনে মোট ৩০টি অধিবেশন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দিন রয়েছে সাতটি, দ্বিতীয় দিন ৯টি, তৃতীয় দিন সাতটি ও চতুর্থ দিন সাতটি। প্রথম দিন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, সমাজকল্যাণ, যুব ও ক্রীড়া, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তিনটি অধিবেশন হবে। একইভাবে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা। এ সময় প্রতি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত থাকবেন।
সম্মেলনে প্রতিটি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলা, সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা আলোচনায় উঠে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে জিআই পণ্য ব্র্যান্ডিং করা, বৈধ পথে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি, সারাদেশের ইকোনমিক জোন প্রকল্পে অগ্রগতি নিয়ে বিশেষ আলোচনা হতে পারে। সম্মেলনের শেষদিন ফিডব্যাক অধিবেশন ও সম্মেলনের মূল্যায়ন বিষয়ে একটি অধিবেশন হবে। এই দুই অধিবেশনে ডিসিরা সম্মেলনে কী পেলেন এবং মাঠে গিয়ে কী কাজ করবেন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নির্দেশনা উঠে আসবে।
প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের সময় ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি মাঠ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বেশকিছু দিক নির্দেশনা দেন। কিন্তু এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসি-বিভাগীয় কমিশনাররা সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না। কেননা সম্মেলন শুরুর আগের দিন রাতে রাষ্ট্রপতি মো.সাহাবুদ্দিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। তবে রাষ্ট্রপতিকে না পেলেও প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করবেন তারা। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময় করবেন। এরপর নৈশ ভোজে অংশ নেবেন। শেষ দিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ সময় বিচার বিভাগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন প্রধান বিচারপতি। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশ ভোজে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ডিসি সম্মেলন।