রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবাসিক ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নাজমুল হাসান তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিদের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ প্রদান করেন। আদালতের আদেশ মোতাবেক এবং জেল কোড অনুযায়ী এ মামলার ঘটনা সংক্রান্তে আসামি সৈয়দ আশফাকুল হককে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং আসামি তানিয়া খন্দকারকে কাশিমপুর কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
আসামিরা আলাদা আলাদা কারাগারে থাকায় ঘটনার বিষয়ে তাদের একত্রে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। ফলে তারা ঘটনা সংক্রান্তে অনেক রহস্যজনক তথ্য দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে ঘটনার মূল রহস্য কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
আবেদনে বলা হয়, এ মামলার ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কোনো মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা কৌশলে বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। ধারণা করা যাচ্ছে, ক্যামেরায় ঘটনার ভিডিও ধারণ থাকার ফলে আসামিরা ঘটনার পরপরই সেখান থেকে মামলার আলামত নষ্ট বা গোপন করার জন্য মেমোরি কার্ড লুকিয়ে রাখতে পারে।
এমতাবস্থায় তাদের নিয়ে বাসায় অভিযান পরিচালনা করলে মেমোরি কার্ড উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যা এ মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে আসামিদের নিয়ে মামলার ঘটনার ভিডিও ধারণকৃত ক্যামেরার মেমোরি কার্ড উদ্ধার অভিযান পরিচালনা এবং উভয়কে মুখোমুখি নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ডে পাওয়া একান্ত আবশ্যক বলে রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে প্রত্যকের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরে আবাসিক ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে কিশোরী গৃহকর্মী প্রীতি ওড়ানের (১৫) মৃত্যু হয়। ওই ভবনের বাসিন্দা সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় প্রীতি কাজ করতেন। প্রীতিদের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামে।
ঘটনার পর স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ আশফাকুল হক, তার স্ত্রীসহ ওই বাসা থেকে ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায়।
পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের বাবা লুকেশ ওড়ান। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড চাইলে আদালত নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ আগস্ট একই ধরনের ঘটনা ঘটে আশফাকুল হকের বাসার। ওই সময় ৯ বছরের শিশু গৃহকর্মী ফেরদৌসি লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়। ওই ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ এনে আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও শিল্পী নামের আরেক নারীকে আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেছিলেন শিশুটির মা।