গাজীপুরের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানাসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু থাকলে ও বুধবার তিনটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। শ্রমিক বিক্ষোভ চলাকালে একটি কারখানার গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। আগুন নিভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভাঙচুর করে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভের জের ধরে অন্তত ১৫টি কারখানার বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়।
বুধবার সকাল থেকে বকেয়া বেতনভাতার দাবিতে গাজীপুরের চক্রবর্তী এলাকায় বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানা শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে। এর আগে মঙ্গলবার ও বকেয়া বেতনের দাবিতে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। কারখানাটির মালিক কারাগারে আটক আওয়ামী লীগ নেতা সালমান এফ রহমান।
শ্রমিকরা জানায়, গত কয়েক দিন ধরে তারা গত মাসের বেতন-ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বেতন দেওয়ার কথা জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেদিন কিছু শ্রমিককে বেতন দেওয়া হলেও বেশির ভাগ শ্রমিক বেতন পায়নি। সে কারনে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দিনভর চেষ্টা করে।
এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পাশের বিগবস পোশাক কারখানার গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। আগুন নেভাতে গেলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
গাজীপুরের কাশিমপুর ফায়ার সার্ভিস এর স্টেশন মাস্টার তাশারফ হোসেন জানান, বুধবার দুপুর ১টার দিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের বিগবস পোশাক কারখানার গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা। সকাল থেকেই পাশের কারখানা বেক্সিমকো গ্রুপে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন চলছিলো। তবে কারা আগুন ধরিয়েছে, এটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট পাঠানো হলে উত্তেজিত শ্রমিকরা গাড়ি ভেঙ্গে দেয়। এতে আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছতে না পেরে ফিরে আসে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট দুটি। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে কারখানা শ্রমিকরা নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
কাশিমপুর এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশের বেক্সিমকো জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ গোলাম মোর্শেদ জানান, বেক্সিমকো কারখানার আন্দোলন চলাকালে ওই এলাকার তুরাগ গার্মেন্টস কারখানায় ভাঙচুর করা হয়। বিগবস পোশাক কারখানায় হামলা চালিয়ে গোডাউনে আগুন দেয়া হয়। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জিরানী এলাকার সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আগে থেকেই চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, গাজীপুর সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার পারটেক্স বেভারেজ লিমিটেড, হোতাপাড়া এলাকার ফুওয়াং সিরামিক লিমিটেড, সিটি কর্পোরেশনের ভার্গো এম এইচ লিমিটেড পোশাক কারখানা ও শ্রীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরাও বিভিন্ন দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন।
গত মঙ্গলবারের শ্রমিক আন্দোলনের জেরে ইতিমধ্যে জেলার অন্তত পাঁচটি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার এস এম নিটওয়্যার লিমিটেড,
গিলারচালা এলাকার ফমকম ফ্যাশন, ফমকম প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি কারখানা।
এসব বিষয়ে গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার এসএম আজিজুল হক জানান, সদর উপজেলার বাঘের বাজার, শিরির চালা এলাকার ৪/৫ কারখানা সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে সেসব কারখানা খুলে দেয়া হবে।
শ্রমিক অসন্তোষ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় গত সপ্তাহে গাজীপুরের বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার থেকে বিজিএমইএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে প্রায় সব কারখানা চালু করেন শিল্প মালিকগণ।