রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যবসায়ীদের আবারও ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত) মেয়াদি ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা (৫০ শতাংশ) জুনের মধ্যে পরিশোধ করলে খেলাপি হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশে ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব ঋণ গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছিলেন, তারা অর্ধেক টাকা জমা দিয়েই নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে থাকতে পারবেন। তবে এই সুবিধা মিলবে শুধু মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে। অবশ্য ব্যাংক খাতের ১৫ লাখ কোটি টাকা ঋণের প্রায় অর্ধেকেই মেয়াদি ঋণ। এর আগে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে কোনো ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত ছিলেন গ্রাহকেরা। চলতি বছরে এপ্রিল-জুন সময়ের জন্য আবারও একই ধরনের সুবিধা দেওয়া হলো।
এই সুবিধা দেওয়ার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সামপ্রতিক সময়ে বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঋণগ্রহীতারা তাদের গৃহীত ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তির সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে উত্পাদন, সেবা খাতসহ সব ব্যবসা চলমান রাখার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা অনুসরণীয় হবে।’
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গত ১ এপ্রিল থেকে বিদ্যমান নিয়মিত মেয়াদি প্রকৃতির ঋণের (স্বল্পমেয়াদি কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণসহ) বিপরীতে এপ্রিল-জুন সময়ের জন্য যে কিস্তি দিতে হবে, তার ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলেই গ্রাহককে খেলাপি করা যাবে না। এই নির্দেশনা অনুযায়ী সুবিধা নেওয়া গ্রাহকদের কিস্তির বাকি অংশ বিদ্যমান ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে আদায় করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরো বলেছে, এই নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এসব ঋণ যথানিয়মে খেলাপি করা যাবে। যেসব গ্রাহক এই সুবিধা নেবেন, তাদের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের ওপর ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনোরূপ দণ্ডসুদ বা অতিরিক্ত ফি (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আরোপ করা যাবে না।
আগে পুনঃ তপশিলের মাধ্যমে খেলাপিমুক্ত হয়েছেন, এমন গ্রাহকেরাও ঋণ পরিশোধের এই সুবিধা পাবেন। ইসলামি শরিয়াভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একই নীতিমালা অনুসরণ করে সুবিধা দিতে পারবে। পাশাপাশি এই নীতিমালার আওতায় সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ, বিনিয়োগের বিপরীতে যে পরিমাণ আরোপিত সুদ, মুনাফা নগদে আদায় হবে, তা আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি-মার্চ সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই সুবিধা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।