কাতার বিশ্বকাপে এবার ইতিহাস গড়ল সৌদি আরব। আজ লুইসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে শিরোপার অন্যতম ফেভারিট লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। ম্যাচের প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পরও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পরপর দুই গোল করে জয় নিশ্চিত করে সৌদি আরব।
প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি গোলে পিছিয়ে পড়ে সৌদি আরব। বিরতি থেকে ফেরার পর সৌদি আরবের হয়ে পরপর দুই গোল করেন যথাক্রমে সালেহ আল-শেহরি ও সালেম আল-ডসারি। এই হারে আর্জেন্টিনার টানা ৩৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিও থমকে গেল।
ম্যাচের প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ১০ মিনিটে লিওনেল মেসি পেনাল্টি থেকে দেয়া গোলে লিড পায় তারা। ওই অর্ধে অন্তত ৪-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারতো শিরোপা ফেভারিট দলটি। কিন্তু তিনটি গোলই বাতিল হয়েছে অফসাইডের কারণে। এ সময় অফসাইডের কারণে বাতিল হয় মেসির একটি ও লটারো মার্টিনেজের দুটি গোল।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই সৌদি আরবের বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের ভেতর জটলা থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন সৌদি গোল রক্ষক মোহাম্মদ আল-ওয়েসিস।
তবে লিড পেতে সময় নেয়নি দক্ষিন আমেরিকার দল আর্জেন্টিনা। ম্যাচের দশম মিনিটে লিড পায় তারা। ডি বক্সের বাইরে থেকে মেসি ফ্রি কিক নিলে প্রতিহত করেন সৌদি আরবের গোল রক্ষক। কিন্তু ইতোমধ্যেই ডি বক্সের ভেতর আর্জেন্টাইন লিয়ান্দ্রো পারদেসকে অবৈধভাবে আল বুলাইহি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভিএআর প্রযুক্তি দেখে পেনাল্টির নির্দেশ দেন কর্তব্যরত রেফারি ভিনসিচ। পেনাল্টি থেকে বাঁ পায়ের মাটি কামড়ানোর শটে সহজে গোল করেন মেসি। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিন।
২২ তম মিনিটে আবারো গোল করে আর্জেন্টিনা। মধ্য মাঠ থেকে উড়ে আসা ক্রসের বল মেসি বেশ দ্রুত নিয়ন্ত্রনে নিয়ে একা থাকা সৌদি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। তবে এর আগেই অফসাইডের নির্দেশ দেন লাইন্সম্যান।
২৮ তম মিনিটে লটারো মার্টিনেজের পা থেকে আবারো আসে গোল। অফসাইট ট্র্যাক ভেঙ্গে ফাঁকায় থাকা সৌদি গোলরক্ষককে পরাজিতও করেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলটি বাতিল হয় অফসাইডের কারনেই।
৩৫ তম মিনিটে আবারো গোল করে আর্জেন্টিনা। মেসির বাড়িয়ে দেয়া বল দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সৌদি গোল রক্ষক আল-ওয়েসিসকে হারিয়ে বল জালে পাঠান মার্টিনেজ। এবারের গোলটিও বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। ইনজুরি টাইমে ডি মারিয়ার একটি প্রচেষ্টা রুখে দেন সৌদি গোল রক্ষক। ফলে ১-০ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফেরার পর চিরচেনা আবহাওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সুদূর দক্ষিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দল সৌদি আরব। সফলও হয় তারা। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ডি বক্সের মধ্যেই ফিরাস আল-বুরাইকানের বাড়িয়ে দেয়া বল প্লেসিং শটে আর্জেন্টিনার জালে জড়িয়ে দেন ১১ নম্বর জার্সি পরিহিত স্ট্রাইকার সালেহ আল-শেহরি (১-১)। ফলে সমতায় ফিরে আসে সৌদি আরব।
এমন সাফল্যে আরো উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকে সৌদি আরব। ৫ মিনিট পর ফের গোল করে এগিয়ে যায় তারা। ৫৩ মিনিটে লেফট উইঙ্গার সালেম আল-ডসারি আর্জেন্টাইন পোস্টে বল পাঠালে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। ডি বক্স থেকে ডান পায়ে নেয়া সালেমের শটের বল আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বাঁ হাতে স্পর্শ করেই উপরের ক্রসবার ঘেষে জালে প্রবেশ করে। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সৌদি আরব।
৮০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিকের সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। কিন্তু চির চেনা সেই ফ্রিকিক কারিশমা দেখাতে পারেননি । তার শটের বলটি ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়।
৮৪ মিনিটে ডি বক্সের মধ্যে ডি মারিয়ার ক্রসের বলে মেসি হেড করলেও সেটি গ্রীবে পুরে নেন সৌদি গোল রক্ষক। ৮ মিনিটের ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে একটি জটলা থেকে প্রথমে বল ফিরিয়ে দেন সৌদি আরবের গোলরক্ষক আল-ওয়েসিস। ওই সময় তিনি নিচে পড়ে যান। এই সুযোগে আর্জেন্টাইন বদলী ফরোয়ার্ড জুলিয়ান আলভারেজ আবারো পোস্টে শট নিলে গোল লাইন থেকে হেডের মাধ্যমে বলটি ফিরিয়ে দেন সৌদি আরবের এক ডিফেন্ডার। ফলে জয় তো দূরের কথা, সমতায়ও ফিরতে পারেনি আর্জেন্টিনা।