পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অধিকাংশ স্লুইসগেট দীর্ঘদিনধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকার পরও পাউবো কর্তৃপক্ষ এগুলো সংস্কারের উদ্দোগ না নেয়ায় উপকূলীয় কৃষিখাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া স্লুইস গেট গুলো প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রনে থাকায় কৃষকের প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছেনা।
এনিয়ে উপজেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোন সুফল পাচ্ছে না কৃষক। এতে কৃষিকাজের তুলনায় প্রভাবশালীদের মাছ চাষ ও স্লুইগেটে জাল পেতে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বেশী, অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকের।
অন্তত: আট বছর আগে উপজেলার নিজকাটা গ্রামের আট ভেন্টের স্লুইসগেটটি বেড়িবাঁধসহ দেবে যায়। এরপর থেকে প্রতি বছর কমবেশি জরুরি মেরামত করে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটা ঠেকাতে বাঁধের ওপর মাটিসহ জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছে। বর্তমানের স্লুইসটির চারটি ভেন্ট অকেজো হয়ে গেছে। এখন ভেন্টের নিচ থেকে সুরঙ্গ হয়ে গেছে। যে কোন সময় এটি ধ্বসে কৃষকের সর্বনাশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘূর্নিঝড় আমফানের সময় জিওব্যাগসহ স্থানীয়রা মাটি দিয়ে জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করেছে। স্লুইসটির চারটি ভেন্টের গেট খারাপ থাকায় নদীর লবন পানি খালে প্রবেশ করছে। নিজকাটা স্লুইস খালটি অন্তত: পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ। নাওভাঙ্গা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়ে এটি পাখিমারা খালের সঙ্গে মিশেছে। এখন যদি লবন পানির প্রবেশ বন্ধ করা না যায় তাহলে কৃষকের আমন ফসলসহ সবজি এবং রবিশস্য আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এতে নবীপুর, নিজকাটা, চাঁদপাড়া,হোসেনপুর, নাওভাঙ্গা, পাখিমারা গ্রামের হাজারো কৃষক অপুরণীয় ক্ষতির কবলে পড়বে। স্থানীয় অহিদ মাঝি জানান, প্রত্যেক মাসে তিনি লোকজন নিয়ে দেবে যাওয়া গর্তে মাটি দেন। কিন্তু নিচ থেকে পানির সঙ্গে ওই মাটি সরে আবার
দেবে যায়। একই দশা কাঠালপাড়ার স্লুইসটির। সব কয়টি ভেন্ট খারাপ। গেট নেই। থাকলেও আটকানো যায় না। এভাবে পক্ষিয়াপাড়া, মেলাপাড়া, পূর্ব-মধুখালী, চরপাড়া, সাফাখালী, লোন্দা, হাফেজ প্যাদা, পাটুয়া, দেবপুর, দশকানি,আনিপাড়া, গাজীর খাল, টিয়াখালী, ইটবাড়িয়া, সদরপুর, গৈয়াতলা, ডালবুগঞ্জসহ শতকরা ৫০ ভাগ স্লুইস কৃষকের কোন কাজে আসে না। নীলগঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুগীর স্লুইস। প্রতি বছর স্থানীয় কৃষকরা নিজেদের অর্থায়নে
লবন পানির প্রবেশ ঠেকাতে স্লুইসটির রিভার সাইডের সংযোগ খালে বাঁধ দেয়। এরপরে ভিতরে খালের মিষ্টি পানি ব্যবহার করে ১২ মাস সবজির আবাদ করেন। কুমিরমারা, মজিদপুর, এলেমপুর গ্রামে শতকরা আশি ভাগ কৃষক সবজির আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এসব স্লুইসগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধির যোগসাজশে যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে তাদের ছত্রছায়ায় একটি প্রভাবশালী মহল মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করতে গিয়ে কৃষকের সর্বনাশ করে আসছে। এভাবে অন্তত:অর্ধশত স্লুইস এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। রয়েছে বিধ্বস্ত দশায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার তথ্যানুসারে, কলাপাড়ায় ৪৭ টি ফ্লাসিং (এফএস), ৫৮টি ড্রেনেজ (ডিএস) এবং ২৫ টি রেগুলেটরসহ ১৩০টি স্লুইসগেট রয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন জানান, কলাপাড়ায় ৫২টি স্লুইস খারাপ রয়েছে। যার মধ্যে ৪০টি আংশিক খারাপ, আর ১২টি সম্পুর্ণভাবে অকেজো হয়ে আছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৪৮ নম্বর পোল্ডারের আটটি স্লুইস মেরামতের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব স্লুইস মেরামত করার কথা জানান তিনি।