পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে ১৩৬ হতদরিদ্র পরিবারের। পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের মূল ফটক থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করনের কাজ শুরু করায় ১৩৬টি হতদিরদ্র পরিবারকে ঘর সরিয়ে অন্যত্র যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এতে উচ্ছেদ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে হতদরদ্রি এসব পরিবার গুলোর। নিরুপায় এসব পরিবারের এখন একমাত্র ভরসা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
বয়োবৃদ্ধ স্বামী মহিন রাঢ়ী ও সেলিনা বেগমের সংসারে এখন আর সুখ নেই। প্রতিদিন সকালে মাছ বাজারে গিয়ে পাইকারি মাছ কিনে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে যা আয় তাই দিয়ে জোড়া-তালি দিয়ে চলছিল তাদের জীবন-জীবিকা। এখন স্বামী অসুস্থ থাকায় বেহাল অবস্থা। নয় জনের সংসারের যোগান দিতে পারছেন না এ পরিবারটি। ঈদ কেটেছে তাদের ধার-দেনায়। উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের বেড়িবাঁধের বাইরের খাস জমিতে দীর্ঘ ২২টি বছর বসবাস করছে এ দম্পতি। টিনশেড ঘরটির চালে, বেড়ায় জং ধরেছে। তারপরও সারাদিন কাজ-কর্ম শেষে সন্ধ্যার পরে এই বসতঘরটিই তাদের যেন স্বস্তি দেয়। কিন্তু উচ্ছেদ আতঙ্কে এখন রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে তাদের।
একই দশায় আমেনা বেগম-জসিম প্যাদা দম্পতির। সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীতে মাছ ধরেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে ইটভাঁটিতে কাজ করেন। শ্রমজীবী এ পরিবারের সাত সদস্য নিয়ে সংসারের বোঝা ঠেলতে গিয়ে অসহায় হয়ে আছেন তারা। তার ওপর বাঁধের ঢালের খাস জমির ঘরটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলায় দিশেহারা এখন তারা। দু:শ্চিন্তার যেন শেষ নেই। কোন জায়গা নেই যেখানটায় যাবেন। বললেন, ‘ খাওয়া-লওয়া নাই। যেখানে থাকি সন্ধার পরে জীর্ণদশার ঘরটিতে গিয়ে একটু শান্তি পাই।’
এলাকার বাসীন্দা ইব্রাহীম মিয়া জানান, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ যেখানেই জমি অধিগ্রহণ করেছে সেখানেই ঘর-জমিজমা, গাছপালার ক্ষতিপুরণ দেওয়ার পরও পাকা ঘর দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। আর আমাদের ১৩৬ পরিবারকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা চলছে জোর করে। খালি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তার দাবি বালিয়াতলী খেয়াঘাটের রাস্তার পাশে, নতুন আবাসনের পাশে এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর পাশে যে খাস জমি রয়েছে, ওই জায়গাটুকু তাঁদেরকে দেওয়া হোক।
ইব্রাহীম জানান, আমরা পুনর্বাসনের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করেছি। মানববন্ধন করেছি। কেউ এক টুকরো খাস জমি দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেনি। এখন এসব পরিবারের অন্তত পাঁচশ’ সদস্য কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন তা তারা নিজেরাও জানেন না।
উচ্ছেদ আতঙ্কে থাকা পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা অধিকাংশ শ্রমজীবী। ২২-২৩ বছর আগে এই বাঁধের পাশে এসে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অতিজোয়ারের ঝাপটার মুখে কোনমতে একটি ঘর তুলে বসবাস করে আসছেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য স্কুলে পাঠাচ্ছেন। হাঁস-মুরগি পালন করছেন। সরকারিভাবে টিউবওয়েল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটানোর পরে অন্তত ঘরে এসে একটু স্বস্তিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে ছিলেন। এখন এই কয় মাস আছেন উচ্ছেদ আতঙ্কে। অসহায় এসব পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
পায়রা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী জানান, ভবিষ্যতে যদি পুনর্বাসনের পরিকল্পনা থাকে, তাহলে এসব পরিবারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।