বৃহস্পতিবার, ১৪ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কমপ্লেক্সে দুর্বৃত্তদের হামলা, ভাঙচুর

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ পিএলসি কমপ্লেক্সে সোমবার দুপুরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।

অন্য স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই গতকালও দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া হাউস ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (পিএলসি) গণমাধ্যমগুলোর অফিসে কর্মীরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত ছিলেন।


কিন্তু সোমবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে এই দৃশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। কর্মব্যস্ত অফিসে হঠাৎ দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালিয়ে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করে। গণমাধ্যমগুলোর শান্তিপূর্ণ অফিসে সৃষ্টি হয় ভীতিকর এক পরিস্থিতি।

শতাধিক দুষ্কৃতকারী সশস্ত্র অবস্থায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সামনে আসে। ধারালো অস্ত্র, হকিস্টিক, লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই দুষ্কৃতকারীরা অতর্কিতে মিডিয়া হাউসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এ সময় তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তারা হামলা চালিয়ে ব্যাপক তাণ্ডব শুরু করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলাকারীরা স্লোগান দিতে দিতে জোর করে প্রধান ফটক খুলে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমগুলোর কম্পাউন্ডে প্রবেশ করে। দুষ্কৃতকারীরা প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভাঙচুর। প্রথমে তারা রেডিও ক্যাপিটালের ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

হামলা চালিয়ে সেখানকার ডেস্ক, কম্পিউটারসহ অন্য সামগ্রী ভাঙচুর করে। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতদের ধাওয়া করে দুষ্কৃতকারীরা। কয়েকজনকে মারধরও করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে শান্ত স্বাভাবিক কর্মপরিবেশ সন্ত্রাসী হামলায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। দুষ্কৃতকারীদের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে অনেকে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।

রেডিও ক্যাপিটালে তাণ্ডব চালানোর পর বাইরে এসে দুষ্কৃতকারীরা মিডিয়া প্রাঙ্গণে রাখা অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মীরা হামলাকারীদের বাধা দিতে গেলে তাদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় দুষ্কৃতকারীরা। এ সময় কয়েকজন দুষ্কৃতকারীকে সামনে থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

এরপর দুষ্কৃতকারীরা দৈনিক কালের কণ্ঠ’র অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। তারা ভেতরে ঢুকে কাচের দেয়াল ও দরজা ভাঙচুর করে। তারা অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা অফিসকর্মীদের দিকে লাঠি নিয়ে তেড়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা কালের কণ্ঠ’র অফিসে ঢোকার দরজা ভেঙে ফেলে। এরপর দুষ্কৃতকারীরা কালের কণ্ঠ’র অফিসকক্ষ ভাঙচুর করে। এ সময় অফিসে থাকা গণমাধ্যমকর্মীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হামলাকারীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রাণ রক্ষায় তাঁরা এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেন। এভাবে দুষ্কৃতকারীরা প্রায় আধঘণ্টা ধরে নারকীয় তাণ্ডব চালায়।

দুষ্কৃতকারীদের সন্ত্রাসী হামলায় মিডিয়া হাউসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছোটাছুটি করতে গিয়ে অনেকে আহত হন। দুষ্কৃতকারীরা ভবন ও মিডিয়া প্রাঙ্গণে থাকা সরঞ্জাম ও গাড়ি ভাঙচুর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী লোকজন ছিল। তাদের কারো কারো মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। বেশির ভাগ দুষ্কৃতকারীর হাতে ছিল লাঠি। অনেকে লুঙ্গি পরাও ছিল। এদের মধ্যে দুজন লাঠি দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা সন্ত্রাসী কায়দায় নানা অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পাশাপাশি তিনটি ভবনে কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজ টোয়েন্টিফোর চ্যানেল, টি স্পোর্টস ও ক্যাপিটাল এফএম রেডিওর অফিস রয়েছে।

এদিকে সন্ত্রাসী এ ঘটনায় র‌্যাব সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান বলেন, হামলাকারীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।

দুষ্কৃতকারীদের এই হামলা গভীর চক্রান্তের অংশ এবং বিশেষ অশুভ উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল। ছাত্র-জনতার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কিছু দুষ্কৃতকারী এই কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে বলে তারা মনে করছেন।

এই হামলার সঙ্গে শিক্ষার্থীরা জড়িত নন বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। কিছু দুষ্কৃতকারী নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এ হামলা চালিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সোমবার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের গণমাধ্যমগুলোর হামলার স্থান পরিদর্শন করতে এসে এমন মন্তব্য করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ