বাংলাদেশ হাইকমিশন, ইসলামাবাদ যথাযথ মর্যাদা, উৎসাহ, উদ্দীপনায় ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উদযাপন করেছে। এ উপলক্ষে দূতালয় প্রাঙ্গন বর্নাঢ্য ব্যানার ও পোস্টারে সুসজ্জিত করা হয়।
সকালে দূতালয় প্রাঙ্গনে হাইকমিশনের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের উপস্থিতিতে পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ রুহুল আলম সিদ্দিকী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, এসময় দূতালয় প্রাঙ্গনে জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠে। এরপর হাইকমিশনার মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।
হাইকমিশনের বঙ্গবন্ধু কর্ণারে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শুরু হয় এবং ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে প্রদত্ত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র বাণী পাঠ করা হয়।
আলোচনাসভায় হাইকমিশনার প্রথমে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদ, দুই লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোন এবং অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে।
হাইকমিশনার বলেন, ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে তার বলিষ্ট তর্জনীর ইশারায় বজ্রকন্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন- “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। বঙ্গবন্ধুর সেই কালজয়ী আহ্বানে জেগে উঠেছিল সমগ্র বাঙ্গালী জাতি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিখ্যাত সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘নিউজউইক’ ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজনীতির কবি’ (পয়েট অব পলিটিক্স) আখ্যায়িত করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর সেই ১৮ মিনিটের অলিখিত জ্বালাময়ী ভাষণের মাধ্যমে একটি নিরস্ত্র জাতিকে সংগ্রামী জাতিতে পরিণত করতে পেরেছিলেন। পরবর্তীতে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সাথে সাথে যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, নয় মাসের সংগ্রামে ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙ্গালী পেয়েছিল একটি মানচিত্র, একটি লাল সবুজের পতাকা, এক স্বাধীনতা সার্বভৌম রাষ্ট্র।
হাইকমিশনার বলেন, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এবং মানবতা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পক্ষে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য ৭ই মার্চের ভাষণ অনুপ্রেরণার একটি উৎস। এ প্রেক্ষাপটে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারী হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করে। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের বিশ্বস্বীকৃতি আজ বাঙালি জাতির জন্য এক বিরল সম্মান ও গৌরবের স্মারক।
হাইকমিশনার বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রার যে ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছেন তারই ধারাবাহিকতায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
হাইকমিশনার ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে শোষণহীন, বঞ্চনাহীন, সমৃদ্ধ ও জ্ঞাননির্ভর একটি সুখি সমৃদ্ধ জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মানে সকলকে যার যার অবস্থানে থেকে একসাথে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।
আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের ওপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে জাতির পিতা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি, অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।