পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে (ইউএনএসসি) ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক, জাতিসংঘের সাহায্য কর্মী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অবজ্ঞা করে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর চলমান হামলার জন্য ইসরাইলকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জবাবদিহি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় চলমান ইসরাইলি নৃশংসতা নিয়ে অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) কার্যনির্বাহী কমিটির একটি উন্মুক্ত ব্যতিক্রমী বৈঠকে যোগ দিতে এখন জেদ্দায় অবস্থানরত মোমেন ওআইসিকে এই বিষয়ে একটি বিশেষ ইউএনজিএ বৈঠকের ব্যবস্থা করার জন্য নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা গাজার হাসপাতালে বর্বরোচিত বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করছি, এটি সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’
মোমেন এ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আহ্বানের জন্য গাম্বিয়ার একটি প্রস্তাবকেও সমর্থন করেন।
মোমেন বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা পরিষদকে গাজায় জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সাহায্য কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাংবাদিকদের হত্যার নিন্দা জানাই এবং ইসরাইলকে তার যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও মানবাধিকার আইনের প্রতি অসম্মানের জন্য জবাবদিহি করার আহ্বান জানাই।’
ওআইসি জানায়, জরুরিভাবে ডাকা বিশেষ ওআইসি বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘গাজা উপত্যকার বিরুদ্ধে আগ্রাসন এবং অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি-যা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে-নিয়ে আলোচনা করেন। সৌদি আরব ওআইসির বর্তমান চেয়ারম্যান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইলি আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানায় যার ফলে ৩ হাজারের বেশি প্রাণ হারিয়েছে, যাদের এক তৃতীয়াংশ নারী ও শিশু।
তিনি বলেন, ‘আমরা গাজার হাসপাতালে বর্বরোচিত বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করছি যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গাজায় ইসরায়েল এখন যে অসম যুদ্ধ চালাচ্ছে তা শুধু অসামঞ্জস্যপূর্ণই নয়, এটি মানবাধিকার ও মানবিক আইনের সমস্ত মৌলিক নীতির লঙ্ঘন করে এবং এটি ‘সকল ফিলিস্তিনিকে সম্মিলিতভাবে শাস্তি’ দেওয়ান সামিল’।
তিনি বলেন, ‘তাই আমরা গাজায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরাইলের মানবিক প্রবেশাধিকার প্রত্যাখ্যান এবং বেসামরিক অবকাঠামোতে নির্বিচারে হামলার কারণে গাজার মানবিক পরিস্থিতি সর্বকালের সর্বনি¤œ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুঃখিত যে নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ১৬ অক্টোবর রাশিয়ান ফেডারেশন উত্থাপিত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য অবিলম্বে মানবিক সহায়তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা দ্ব্যর্থহীনভাবে ইসরাইলের ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক তাদের নিজস্ব মাতৃভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। এটি সমগ্র অঞ্চলে মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাবে এবং এটি জাতিগত নির্মূলের সামিল।
তিনি বলেন, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে কেউ জয়ী হয় না এবং খুনিরা নিশ্চয়ই মানুষের হৃদয় ও মননে হেরে যায়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংঘাতের মূল কারণগুলো সমাধানের আহ্বান জানায়।
মোমেন বলেন, ঢাকা বিশ্বাস করে যে ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার আদায়ের মাধ্যমেই এই পুনরাবৃত্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্বাস করে যে এই সমাধান উপলব্ধির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একত্রিত হওয়া উচিত।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে এবং স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর এবং কাজ করার আহ্বান জানান।