শুক্রবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সরকার এখনো নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি: ব্যারিস্টার আনিস

জাতীয় পার্টি একাংশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, আগামী নির্বাচন হতে যাচ্ছে মব কালচারের নির্বাচন।

সোমবার রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস পার্টি সেন্টারে ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’ এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

জাতীয় পার্টি- জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে প্রধান উপদেষ্টা, জাতীয় পার্টি -জাপা চেয়ারম্যা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মুখপাত্র করে ১৮ টি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, সিনিয়র চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম জহির, জনতা পার্টি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি শাহ মো. আবু জাফর, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের সভাপতি আবু লায়েস মুন্না, তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব মেজর অবসরপ্রাপ্ত ডা. হাবিবুর রহমান, গণফ্রন্টের মহাসচিব আহমেদ আলী শেখ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ, জাতীয় ইসলামী মহাজোটর চেয়ারম্যান আবু নাসের এম ওয়াহেদ ফারুক, জাতীয় সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মেজর অবসরপ্রাপ্ত আমীন আহমেদ আফসারি, ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান এম আশিক বিল্লাহ, অ্যালায়েন্স ডেমোক্রেটিক পার্টি এডিপির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আর করিম, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান এম আর এম জাফর উল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ স্বাধীনতা পার্টির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, বাংলাদেশ স্বাধীন পার্টির চেয়ারম্যান মির্জা আজম, ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান নারায়ণ কুমার দাস।

আনিসুল ইসলাম বলেন, সবার প্রশ্ন নির্বাচন হবে কি-না। অর্থাৎ সরকার এখনো নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে মব কালচারের নির্বাচন। যদি না এই সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে না পারে। নির্বাচন যদি আমরা ঠিকভাবে না করতে পারি, অতীতের নির্বাচনগুলোর ভুল থেকে যদি শিক্ষা নিতে না পারি, তাহলে কিভাবে সম্ভব? বর্তমান যে অবস্থা চলছে সে অবস্থা থাকলে এটি প্রকৃত একটি মব কালচারের নির্বাচন হবে।

তিনি বলেন, আমাদের যে সুযোগ এসেছে -সেটিকে ভালোভাবে কাজে লাগানো উচিত। কারণ নির্বাচনই গণতন্ত্রের প্রথম ও প্রধান পাথেয়। নির্বাচন কমিশন বলছে তারা প্রস্তুত। কিন্তু আমরা এর কোন প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। আমরা আশা করি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করে নির্বাচনকে সঠিকভাবে আয়োজন করা হবে। যাতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।

জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৮টি দল একীভূত হয়ে আমরা আজ জোট করেছি। এই জোট কেবল নির্বাচনি জোট নয়, এটি রাজনৈতিক জোট। আমাদের জোটে অংশগ্রহণকারীরা এতে সম্মতি দিয়েই অংশগ্রহণ করছে। দেশ যে বিভাজনের মাঝে আছে আমরা সে বিভাজন দূর করে একটি ঐক্যবদ্ধ রাজনীতি উপহার দিব।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করে ফেলেছিল। ১৯৯২, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন মানুষের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য। এরকম পরিবেশ কেন সৃষ্টি করা হচ্ছে না?

আনিসুল ইসলাম আরো বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি একটি শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন অর্থনীতির জন্য। আমরা অনেক ভুল করেছি। আমরা দলীয়ভাবে সেই ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছি। কিন্তু – একটা সরকারকে পালিয়ে যেতে হয় সেটি আমরা চাই না।

রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধপূর্ণ বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর আমরা দেখছি প্রধান দলগুলো একজন অপরজনের অতীত নিয়ে কথা বলছে। এটি আমরা চাই না। আমরা চাই ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা হোক। আমরা আমাদের প্রশাসন, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা উন্নতি না করে ৭১-এ কে কী করেছে, কে আগে কী করেছে সেটা চিন্তা করছি। আমরা এসব চাই না। আমরা চাই পুরোনো সব ভুলে যেতে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ হাই কমিশনের রাজনৈতিক কাউন্সিলর, মিঃ টিম ডাকেট মার্কিন দূতাবাস প্রতিনিধি কামরুল হাসান খান, ব্রুনাই মিশন প্রধান মি. রোজাইমি আবদুল্লাহ, ভারতীয় দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) মিস পুজা ঝাও এফিসাস, কাজী শহীদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা পত্র পাঠ করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

এসময় জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এদেশের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তাকে বাদ দিয়ে দেশের ইতিহাস লেখা যাবে না। তিনি গণতন্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য ১৯৮৬ সালে নির্বাচন দিয়েছিলেন। কিন্তু সে কাঙ্খিত গণতন্ত্র এখনো দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে।

হাওলদার বলেন, আমরা আশা করি, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ও তার সরকার সকল দলকে নিয়ে একটি সুস্থ নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূল নির্বাচন করবেন। কোনো দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে, সে নির্বাচনের পর গঠিত সরকার ক্ষণস্থায়ী হবে। অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আমরা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে হয় নাই। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। যখন কেউ স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেন,আমাদের হৃদয়ের রপ্ত করণ হয়। সশস্ত্র বাহিনী ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল।

কিন্তু সে সশস্ত্র বাহিনীকে ছোট করে, কটাক্ষ করে,তাদেরকে নানাভাবে হেশ প্রতিপন্ন করলে আমাদের হৃদয় রক্তক্ষরণ হয়। রাজনীতিতে কেউ চির শত্রু নয়,কেউ চির মিত্রও নয়। আমরা সকলে মিলে আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে পারি। যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল আমাদের নেতা এরশাদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ