মঙ্গলবার, ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আওয়ামী লীগ বিরোধী অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যথাযথ জবাব দিতে বলেছেন। প্রতিটি ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা থাকায় তারল্য নিয়ে কোনো গুজবে কান না দিতেও তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

আজ মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল দেশ হওয়ার সুযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব দিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করছি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকে টাকা নাই বলে কিছু গুজব ছড়ানো হচ্ছে। টাকা নেই বলে অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখলে চোরের পোয়াবারো, তারা চুরি করে খেতে পারবে। সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছে কেউ কেউ, এদের সঙ্গে চোরের সখ্যতা রয়েছে কি না সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকাল রাতে (৫ডিসেম্বর) তিনি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ বিষয়ক বৈঠক করেছেন এবং অর্থসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের সঙ্গেও কথা বলেছেন। আজ সকালে অর্থমন্ত্রীর সাথেও এব্যাপারে আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন,‘আল্লাহর রহমতে আমাদের কোথাও কোন সমস্যা নাই। প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে। কাজেই আমি বলবো গুজবে কেউ কান দেবেন না। এটাই সকলের কাছে আমার অনুরোধ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যে কথা বলে মানুষকে তারা বিভ্রান্ত করতে চায়। একটা শ্রেনী আছে তারা এটা করবেই আমি জানি। কারণ মিথ্যে কথায় তারা পারদর্শী। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেটাকেই আমাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগায় তারা। কাজেই এদিকে সকলের বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ৩৫ লাখ মানুষকে ঘর করে দিয়েছে। জাতির পিতার এই বাংলাদেশে কেউ ভ’মিহীন-গৃহহীণ থাকবেনা। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় ভ’মিহীন-গৃহহীণ মানুষ খুঁজে বের করার আহবান জানান তিনি। তাদের বৃত্তান্ত দিলে সরকার তাদের পুণর্বাসন করবে বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছিলাম বলে ঘর ভরে গেছে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এর উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।’

তিনি বলেন, জবাবটা বেশি কিছু না, ওরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে যেটা লেখে তার জবাবে ওদের অপকর্মটা যদি কমেন্টে ছেড়ে দেয়া যায়, তাহলেই ওরা ওটা বন্ধ করে দেবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে ভাল। ওরা যা বলবে বিএনপি ক্ষমতায় থেকে কি করেছে, তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের খুন, কাকে কাকে মেরেছে, তাদের ভোট চুরি, ডাকাতি- এগুলো তুলে দিলেই যথেষ্ট। আমার মনে হয় ছাত্রলীগ এই কাজটা করতে পারবে।

জাতির পিতা সোনার বাংলাদেশ গড়তে যে সোনার মানুষ চেয়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই সেই সোনার মানুষ হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতাই চায়নি তারা এ দেশের উন্নয়ন কখনোই দেখবে না। মানুষ সামনের দিকে আগায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে পেছনে যায়, ভূতের মতো। তারা মনে হয়, আমাদের দেশে ভূতের রূপ নিয়েই আসে।

তিনি বলেন, মানুষের ভোট চুরি করলে মানুষ ছেড়ে দেয় না-এটা খালেদা জিয়ার মনে থাকা উচিত। জনগণ স্বতঃফূর্তভাবে আমাদের ভোট দেয়। ভোট কারচুপির কালচার দিয়েছে জিয়াউর রহমান। হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে জনগণের ভোট ছিনিয়ে নিয়েছে। না ব্যালট পাওয়া যায়নি। সব হ্যাঁ ভোট ছিল।

সরকারের ঢালাও সমালোচক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শ্রেনীর কঠোর সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষও জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে তখন কথা বলেছিলেন। এখনো অনেকে আছেন খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের সঙ্গে। মানি লন্ডারিং, অস্ত্র কারবারি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তারেক। খালেদা জিয়া এতিমের টাকার আত্মসাতের মামলার আসামি। এই অপরাধীদের সঙ্গে এখন অনেক জ্ঞানী-গুণীও গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বুদ্ধিজীবী নন, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীজীবী। তারা খালেদা-তারেকের সঙ্গে গিয়ে মিলেছেন।

ছাত্রদলের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার পেটুয়া বাহিনী সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দেয়। ঢাবিতে রাতের অন্ধকারে ভিসিকে সরিয়ে নতুন আরেকজনকে বসিয়ে দিয়ে ভিসির পদটাও দখল করে নেয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকসহ বহু নেতাকর্মী হত্যা করে। তাদের অত্যাচার নির্যাতনে সারাদেশ ছিল নির্যাতিত। শুধু ক্ষমতায় থাকাকালেই নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও তাদেও অগ্নিসন্ত্রাসের কথা সবার জানা। ২০১৩-২০১৪ সালে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে দগ্ধ করে তারা। বাস-লঞ্চ-রেল কোনো কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

তিনি বলেন, বিএনপির কাজই হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগকে শিক্ষা দিতে ছাত্রদলই যথেষ্ট’-এর প্রতিবাদে আমি ছাত্রলীগের হাতে বই-খাতা-কলম তুলে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, শিক্ষা শুধু নিজেরাই গ্রহণ করবে না, গ্রামে গিয়ে নিরক্ষর মানুষকে শিক্ষা দেবে। তারা সেটিই করেছে। আমাকে রিপোর্টও দিয়েছে। আমাদের পেটুয়া বাহিনী লাগে না।

সম্মেলনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কাছে লেখাপড়ার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, লেখাপড়া শিখে এদেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে।

তিনি বলেন, আমি চাই বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতাকর্মী তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যে এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে, খুনি, রাজাকার, আল বদর, যুদ্ধাপরাধী এরা যেন কোনদিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে, সেইভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যে যাই করুক না কেন লেখাপড়াটা শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে কাজ করতে গেলে প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানব শক্তি দরকার। কাজেই আমাদের এই যুব সমাজ যারা আমাদের ভবিষ্যত, তারাই আমার ২০৪১ এ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক। তাদেরকে আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। তারা প্রযুক্তি এবং কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে এবং আমাদের আরো উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই, যারা মেধাবী তাদেও নিজেদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা যেমন নিজেদের করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থার দরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার আবার সেইভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের শিক্ষার দরকার রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেদিন আমরা হারিয়েছি আপনজনদের। বাংলাদেশ হারিয়েছিল তার উন্নয়নের সব সম্ভাবনা। খুনিদের বানিয়েছিল সারাবিশ্বের প্রতিনিধি। তাদের যোগ্যতা কী? জাতির পিতার খুনি।

শেখ হাসিনা জাতির পিতার বক্তব্য ‘আমাদের ইতিহাস ছাত্রলীগের ইতিহাস’ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে শহিদদের তালিকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীই বেশি। প্রতিটি সংগ্রামেই ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। আগামী দিনেও তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই আশাই করি।’

তিনি করোনা ভাইরাস মহামারীর রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে বিদ্যুৎ,পানি, জ্বালানি তেলসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করেন।
তিনি নিজ নিজ আবাস স্থলে বিদ্যুৎ পানি ব্যবহারে সকলকে সাশ্রয়ী হতেও পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ যে সুবিধা দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি মজবুত ভীতের ওপর দাঁড়িয়েছে সেজন্যই তারা আসছে, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী এরআগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ছাত্রলীগ কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে তিনি ছাত্রলীগের ওয়েবসাইট ও বিসিএল কমিউনিটি অ্যাপের উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি যথাক্রমে কাউন্সিলে সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও শোক প্রস্তাব পেশ করেন।

নিহত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ