সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও নরসিংদী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন মারা গেছেন। সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
কারা সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত-উল ফরহাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তাঁর ছেলে মানজুরুল মজিদ মাহমুদ সাদিও ফেসবুকে এক পোস্টে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি জেল হেফাজতে ছিলেন। কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন নূরুল মজিদ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর গুলশান থেকে নূরুল মজিদকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের ব্রাহ্মনহাটা গ্রামে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নরসিংদীতে হত্যা, আক্রমণ ও ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে ছিলেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কারা সদর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে uncontrolled bowel and bladder রোগের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রোববার বিকেল ৪টার দিকে তাঁকে পুরাতন ভবনের পঞ্চম তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।
অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ ১৯৫০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়ায় বাগানবাড়ী এলাকায়। তাঁর বাবা প্রয়াত আইনজীবী এম. মজিদ ও মা নূর বেগম।
নূরুল মজিদ মাহমুদ ১৯৬৭ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএসসহ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবী। বৃহত্তর ঢাকা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলর ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ছিলেন।
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুথান, স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন সময়ে তিনি কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তিনি যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন।
১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নরসিংদী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে নরসিংদী-৪ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে নরসিংদী-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দশম জাতীয় সংসদের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
নূরুল মজিদের মৃত্যুর খবরে তাঁর নির্বাচনী এলাকা বেলাব-মনোহরদীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে শোক বিরাজ করছে। তারা প্রকাশ্যে কোনো শোকসভা বা কর্মসূচি না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাবেক শিল্পমন্ত্রীর মৃত্যুর খবরে বিভিন্ন পোস্ট করছেন।