বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভূমিকম্পে ধসে পড়ল বহুতল ভবন, আটকা ৪৩ শ্রমিক

মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। চীন, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশেও এই কম্পন অনুভূত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়নি। প্রাথমিক ভূমিকম্পের মাত্র ১২ মিনিট পরেই মায়ানমারের সাগাইং অঞ্চলে ৬.৪ মাত্রার আরো একটি শক্তিশালী আফটারশক আঘাত হেনেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার মধ্য মায়ানমারে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে এবং দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি ৭.৭ মাত্রার এবং এর গভীরতা ছিল ভূঅভ্যন্তরের ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) গভীরে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মায়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে প্রায় ১৭.২ কিলোমিটার দূরে, যার জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। তবে মায়ানমারের প্রতিবেশি দেশ থাইল্যান্ডে এই কম্পন তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে।

প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার (৬২০ মাইল) দক্ষিণে থাই রাজধানী ব্যাংককের ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং শত শত মানুষ আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসে। স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ফুটেজে দেখা যায়, ব্যাংককে মানুষ ভবনগুলো থেকে বের হয়ে রাস্তায় জড়ো হচ্ছে। একটি ভবনের ছাদে অবস্থিত সুইমিংপুল থেকে পানি উপচে নিচে রাস্তায় পড়তে দেখা যায়।

উভয় দেশেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে।

একটি ক্লিপে ব্যাংককের চাতুচাক মার্কেটে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ার দৃশ্য দেখা গেছে। ব্যাংককে সরকারি অফিসের নির্মাণাধীন একটি ৩০তলা বিশিষ্ট আকাশচুম্বী ভবনধসে পড়ে। অন্যটিতে মিয়ানমারের আভা এবং সাগাইং অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগকারী আইকনিক আভা সেতুটি ভেঙে পড়ার দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে।

মায়ানমার কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

মায়ানমার ফায়ার সার্ভিসেস বিভাগের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমরা হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করার জন্য ইয়াঙ্গুনে অনুসন্ধান শুরু করেছি এবং ঘুরে দেখছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

মায়ানমারের প্রাচীন রাজকীয় রাজধানী মান্দালয় থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোতে ধসে পড়া ভবন এবং শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে পোস্টগুলো যাচাই করতে পারেনি।

শহরের একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সবকিছু কাঁপতে শুরু করলে আমরা সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসি। আমি আমার চোখের সামনে একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়তে দেখেছি। শহরের সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে এবং কেউ ভবনের ভেতরে ফিরে যেতে সাহস পাচ্ছে না।’

শহরের আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী থেত নাইং ওও রয়টার্সকে বলেছেন, ‘একটি চায়ের দোকান ধসে পড়েছে এবং ভেতরে বেশ কয়েকজন আটকা পড়েছে। আমরা ভেতরে যেতে পারিনি, পরিস্থিতি খুবই খারাপ।’ তৃতীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, শহরের একটি মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চীনের সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, মায়ানমারের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিম ইউনান প্রদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ইয়াঙ্গুনে যোগাযোগ করা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দেশের বৃহত্তম শহরের ভবনগুলো থেকে অনেক লোক দৌড়ে বেরিয়ে এসেছিল। থাইল্যান্ডের তুলনায় মায়ানমারে ভূমিকম্প তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।

১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশটিতে সাত মাত্রার ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত হানে যার সবগুলোই ছিল সাগাইং ফল্টের কাছে। ভূপৃষ্ঠের নিচের ওই ফাটল দেশটির মাঝ বরাবর চলে গেছে। থাইল্যান্ড মূলত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল নয়। কিন্তু সেখানে অনুভূত হওয়া প্রায় সব ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হয় প্রতিবেশী মিয়ানমার। ব্যাংককের ভবনগুলোর শক্তিশালী ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন নয়, এ কারণে সেখানে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে।

সূত্র : রয়টার্স, এএফপি

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ