বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা করে অস্ত্র বিক্রি করতে চায় চীন। কারণ বাংলাদেশের জাতীয় অবস্থার সঙ্গে চীনের অস্ত্র উপযুক্ত।
মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্পে সহায়তা দিতে প্রস্তুত চীন। এ ব্যাপারে চীনের প্রস্তাবের ব্যাপারে বাংলাদেশের সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছে তার দেশ। চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পাঠ্যবই ও ওয়েবসাইটে আঞ্চলিক মানচিত্রে চীনের অবস্থান দেখানো নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ মানচিত্র পরিবর্তন করবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এই সফরের নানা দিক তুলে ধরতে ঢাকায় চীনা দূতাবাসে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অত্যন্ত বিস্তৃত। এই সম্পর্কের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ প্রভৃতি যেমন আছে; তেমনি আছে সামরিক সহযোগিতা। দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিনিময় কর্মসূচির পাশাপাশি রয়েছে প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্র বিক্রির জন্য অন্য দেশগুলো এগিয়ে এলেও চীন উদ্বিগ্ন নয়। কারণ আমরা প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রি করতে সক্ষম। আমাদের অস্ত্র বাংলাদেশের অবস্থার জন্য উপযুক্ত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আমরা সবচেয়ে ভালো সহায়তা দিতে পারব বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
তিস্তা প্রকল্পে সহায়তার ব্যাপারে চীনের অবস্থান কী জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন বলেন, তিস্তা প্রকল্পের জন্য ২০২১ সালে বাংলাদেশের তদানীন্তন সরকারের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়েছি। তারপর আমরা প্রকল্পের প্রস্তাবও পেয়েছি। প্রস্তাবের ব্যাপারে আমাদের মূল্যায়ন হলো, প্রকল্পটি বিশাল এবং এটি বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা আমাদের মূল্যায়ন ২০২৩ সালে জমা দিলেও দুই বছর পর এখনো বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সাড়া পেলে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারব। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। কারণ প্রকল্পটি বাংলাদেশের নিজস্ব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারতের সঙ্গে চীনের সীমানা এবং চীনের তাইওয়ান এবং হংকং সম্পর্কে বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে ও ওয়েবসাইটে মানচিত্রে যা উল্লেখ আছে তা সঠিক নয়। আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক এক চীন নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। হংকং ও তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি বিশ্বাস করি, মানচিত্র সংশোধন করে বাংলাদেশ চীনের অবস্থান অন্তর্ভুক্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, চীনের সাউদার্ন এয়ারলাইন্স ৯/১০টি পুরোনো বিমান নিলামে বিক্রি করবে। নিলামটি এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ বিমানকে এই নিলামে অংশ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে চীন মেডিকেল সহায়তা দেবে। চীনের তিনটি বড় হাসপাতাল বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসার জন্য চালু করা হবে। বাংলাদেশের রোগীদের যাওয়ার জন্য একদিনেই ভিসা দেওয়া হবে। বাংলাদেশেও চীনের বিনিয়োগে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ যদি ঢাকায় কোনো জায়গা দিতে পারে তবে চীন এ দেশে হাসপাতাল নির্মাণ করে দেবে। তিনি বলেন, চীন ও বাংলাদেশ খুব ভালো প্রতিবেশী। আমরা পরস্পরের বিশ্বস্ত অংশীদার। দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি খুবই মজবুত। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনেও চীন আন্তরিকভাবে কাজ করছে।