বুধবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশের বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার আবু সাঈদ: জাতিসংঘ

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তাকে পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি করেছে।

২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের বলপ্রয়োগের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা হয়েছে এইচসিএইচআর-এর তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ২৩ বছর বয়সি আবু সাঈদ শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।

গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। যখন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট দিয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিল, পুলিশ গ্যাসের শেল এবং ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করে। আবু সাঈদ গুরুতর আহত হন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার মাথায় আঘাত ও গুলির চিহ্নের উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একাধিক নির্ভরযোগ্য সাক্ষী এবং ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে, আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডে পুলিশের সরাসরি ভূমিকা এবং দায় যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। পুলিশ ছাত্রলীগ সমর্থকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আবু সাঈদও মারধরের শিকার হন এবং পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও শটগান দিয়ে গুলি করে। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন, তাদের মধ্যে একজনের চোখ গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভিডিও ফুটেজ থেকে জানা যায়, যখন আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি পুলিশের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করেননি। এরপর তিনি ‘আমাকে গুলি করো’ বলে চিৎকার করলে, দুই পুলিশ সদস্য সরাসরি তার দিকে শটগান দিয়ে গুলি করেন। ফরেনসিক বিশ্লেষণে আবু সাঈদের শরীরে শটগানের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং জানা যায় যে তাকে অন্তত দুবার গুলি করা হয়েছিল। শটগানটি মেটাল প্যালেট দিয়ে ভরা ছিল এবং পুলিশ তাকে প্রায় ১৪ মিটার দূর থেকে গুলি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তার মাথায় কোনো গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা অন্য কোনো মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবে, গুলি করার পর আবু সাঈদের রক্তপাত ও হাইপোভোলেমিয়া দেখা গিয়েছিল, যা মৃত্যুর কারণ হিসেবে শটগানের গুলিকে দায়ী করা হয়েছে। এই সব তথ্যের ভিত্তিতে এটি স্পষ্ট, আবু সাঈদকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়েছে।

জাতিসংঘের বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রতিবেদন এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, এদিন নিরাপত্তা বাহিনীর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যেখানে বছরের পর বছর ধরে বিচার ছাড়াই বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের আটক করে রাখা হয়েছিল। গত ১৫ বছরে নিরাপত্তাবাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এসেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এবার জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

একইসঙ্গে পতনের আগে আওয়ামী লীগ দাবি করেছিল, আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘের সহায়তা স্বাগত জানানো হবে। এবার জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ