কারামুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। ১৭ বছর কারাবাসের পর মুক্তি পেলেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান বাবর।
গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনে করা পৃথক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের দায় থেকে খালাস পান লুৎফুজ্জামান বাবর।
রায়ে লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়া খালাস পাওয়া অপর চারজন হলেন– রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন। এর আগে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা অপর মামলায় গত ১৮ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড থেকে লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জন খালাস পান।
আদালতে লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
হাইকোর্টের রায়ে পরেশ বড়ুয়াসহ পাঁচজনের সাজা কমানো হয়েছে। বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন পাওয়া পরেশ বড়ুয়ার সাজা ১৪ বছর করা হয়েছে। আর অপর চার আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। তারা হলেন জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার তৎকালীন মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, এনএসআইর সাবেক উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, তৎকালীন পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ ও হাফিজুর রহমান।
এ ছাড়া মারা যাওয়ার কারণে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা চারজনের আপিল বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামী, এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহিম, শ্রমিক সরবরাহকারী দ্বীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজি সোবহান।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল ঘাট থেকে ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান আটক করা হয়। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা করে পুলিশ। দুটি মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), লুৎফুজ্জামান বাবর, পরেশ বড়ুয়া, দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছায়, যা হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে রাষ্ট্রপক্ষে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। অস্ত্র আইনের মামলায় উভয় পক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল রায় দেন হাইকোর্ট।