বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশ মারা গেছে তার দায় শেখ হাসিনার: নাহিদ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার সব নেতাকর্মী এবং পুলিশ বাহিনীকে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়ে কাউকে না জানিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্তের কারণে সেদিন অনেক পুলিশ সদস্য মারা যান। এ আন্দোলনে যত পুলিশ মারা গিয়েছে তার দায় শেখ হাসিনার।

তিনি বলেন, ‘আমরা শেখ হাসিনাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছিলাম কিন্তু তিনি তা না করে দেশে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর স্নাইপার দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে।’

রোববার (২০ অক্টোবর) ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামের কথা জানি। আবার এর উল্টোদিকে বিভিন্ন ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের দালালির কথাও জানি। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বর্তমানে গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে তা এর আগে বাংলাদেশে কখনো এরকম চর্চা হয়েছে সেই ইতিহাস আমার জানা নেই।‌’

উপদেষ্টা বলেন, ‘গণমাধ্যম থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট এবং আকাঙ্ক্ষা পরিকল্পিতভাবে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুঃখের কারণ, এখনও আমাদের অনেক ভাই-বোন আহত অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এখনও অনেকে শহীদ হচ্ছে; অথচ আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সেই শহীদ এবং আহতদের খবর দিনকে দিন কমে আসছে। জনগণের স্মৃতি থেকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসী তাদেরকে শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে; সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহীদ বলতে কার্পণ্য করছে।’ গণমাধ্যমে তাদেরকে মৃত এবং নিহত হিসেবে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘এই গণ-অভ্যুত্থান রক্তের মাধ্যমে ঘটেছে, রক্ত দিয়েই নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, এই ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়।’

সাংবাদিকদের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেক সাংবাদিক শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন। প্রেসক্লাবের অনেক সদস্য আমাদের গণ-অভ্যুত্থানে সমর্থন জুগিয়েছেন। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সময় আমরা শুনেছি, আমাদের সংবাদ প্রচার করতে দেয়া হয়নি, সংবাদ সংগ্রহের কারণে মিডিয়া হাউজগুলোতে সাংবাদিকরা নির্যাতিত হয়েছেন। এখনো সেই সাংবাদিকদের নানা প্রকার চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। সে হাউজগুলোতে ফ্যাসিবাদের এজেন্টরা রয়ে গেছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলছি; সেই গণমাধ্যমের মধ্যথেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করে জনগণের সামনে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছিলাম শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ ও রক্তচোষা, তাই প্রমাণিত হলো। আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই একটা আন্দোলন করছিলাম। সর্বপ্রথম সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমরা বারবার আমাদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেছি কিন্তু তারা আমাদের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়েছে। আপনারা দেখেছেন কিভাবে আমাদের গুম করা হয়েছে এবং তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে থাকা সমর্থকদের সরকারবিরোধী আন্দোলন করার জন্য উসকানি দিচ্ছে। আমি তাদের বলতে চাই শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রাজনীতি করার জন্য আর ফিরতে পারবে না; শুধুমাত্র ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়ানোর জন্যই ফিরবে। যারা এখনও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উসকানিতে জনজীবন দুর্বিষহ করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে সাবধান করে দিতে চাই।’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এক জিনিস আর ফ্যাসিবাদের পক্ষে কথা বলা অন্য জিনিস। আবারও বলতে চাই, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করুন কিন্তু জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না, ছাত্র-জনতার রক্তের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।’

উপদেষ্টা প্রেসক্লাবের লড়াকু সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানান এবং যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার ঘোষণা করেন এবং অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেসক্লাবের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটেন।

কারা নির্যাতিত আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক ও বর্তমান নেতারাসহ অসংখ্য সাংবাদিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষ

ফেসবুকে যুক্ত থাকুন

এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ

সর্বশেষঃ