চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ফের হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত ২০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় অতর্কিতভাবে প্রেসক্লাবের প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে ক্লাবে প্রবেশ করে কিছু দুর্বৃত্ত। পরে তারা চতুর্থ তলায় ক্লাবের মূল অফিসে উঠে সেখানেও তালা ভেঙে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে তারা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কক্ষসহ বেশকিছু কক্ষে ভাঙচুর চালায়। পরে তারা ক্লাবে উপস্থিত থাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ সাধারণ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। এতে সিনিয়র সাংবাদিক নির্মল চন্দ্র দাশ, গোলাম মর্তুজা আলী, হেলাল সিকদারসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে আসে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় তারা অবরুদ্ধ হওয়ার প্রায় তিনঘণ্টা পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে থাকা ৪০ জন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ (বিএফইউজে)। এসময় তারা জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ, মিডিয়া রুম, মিটিং রুম, হিসাব বিভাগ এবং রিসিভশন ভাঙচুর করে। তারা সিসিটিভি ও কম্পিউটারের হার্ডডিস্কসহ ক্লাবের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নেতারা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে প্রবেশ করতে হাতুড়ি ও শাবল দিয়ে প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় উপস্থিত থাকা সাংবাদিকদের মারধরও করে তারা। হামলার নেতৃত্বে ছিল- শাওনেওয়াজ, সাইফুল ইসলাম শিল্পী, আফজাল, সালেহ নোমান, আরিয়ান লেনিন, বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুল ইসলাম, নগর বিএনপির সাবেক স্বাস্থবিষয়ক সম্পাদক ডা. সারোয়ার আলম, যুবদলের আলমগীর নূরসহ ৩০ থেকে ৪০ জন।
অথচ নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, এসব অপকর্মের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। যারা এ দুর্বৃত্তপনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
প্রেসক্লাবের নেতারা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কিছু দুর্বৃত্ত ক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার কক্ষ ভাঙচুর করে। তছনছ করে ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ নথিও। এসময় দুর্বৃত্তদের সঙ্গে ছিল মাদক মামলার আসামি, ধর্ষণ মামলার আসামি, সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক এমন হামলার তীব্র নিন্দা জানান। একইসঙ্গে তারা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
হামলার ঘটনাটি জানানো হলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি খুবই ন্যক্কারজনক। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার, সেনাবাহিনীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। দলমত নিরপেক্ষ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বার বার দুর্বৃত্তদের এমন হামলার ঘটনায় আমরাও উদ্বিগ্ন।
সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চর দখলের মতো চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে কিছু ঘটতে দেওয়া হবে না।
বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জমান ও সেনা প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ করে তিনি জানান, ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।